আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন

আখ চাষের শুরু করার আগে আখ চাষের মৌসুম এবং আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। অন্যান্য অর্থকরী ফসল গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হলো আখ। আখ চাষের জন্য বাংলাদেশ বেশ প্রসিদ্ধ। আখের উৎপাদন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন


সূচিপত্রঃ- আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন

  • আখ চাষের সময়কাল
  • মাটি ও জলবায়ু
  • আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন
  • আখ চাষের পরিচর্যা

আখ এমন একটি ফসল যা পৃথিবীর মোট শর্করা উৎপাদনের  ৭৫% শর্করার যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়াও আখ গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। আখ হলো বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এই আখের উৎপত্তি হয়েছিল এশিয়াতে। আখ প্রধানত গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে জন্মে থাকে। সারা বিশ্বের মধ্যে ব্রাজিল ও ভারতে সবচাইতে বেশি আখ উৎপাদিত হয়।

আখ চাষের সময়কাল

আখ চাষের জন্য সঠিক সময় হল অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত। তবে এই সময়ের মধ্যে চারা রোপণের উত্তম সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত। চারা রোপণের জন্য প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কাটিং আখ বা সেট বীজ প্রয়োজন হতে পারে।

মাটি ও জলবায়ু

মাটিঃ আখ বিভিন্ন ধরনের মাটিতে জন্মাতে পারে। তবে আগ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত হলো উত্তম জল-নিষ্কাশন সম্পন্ন, গভীর, দোআঁশ মাটি। আখের বৃদ্ধির জন্য মাটির pH ৫ থেকে ৮.৫ মাত্রার মধ্যে থাকা প্রয়োজন, তবে ৬.৫ হলো সর্বোত্তম মাত্রা।
জলবায়ুঃ আখ ৩৬.৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৩১.০ ডিগ্রি দক্ষিণ নিরক্ষরেখায় অবস্থিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মধ্যে অভিযোজিত হয়ে বেড়ে ওঠে। কাণ্ডের কাটা অংশ থেকে অঙ্কুরোদগম এর জন্য ৩২ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো আদর্শ তাপমাত্রা। আখ চাষের জন্য আদর্শ বৃষ্টিপাত হলো ১১০০ থেকে ১৫০০ মিলিমিটার। কারণ আখ চাষের জন্য একটানা একটানা ৬ থেকে ৭ মাসেরও বেশী প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। আখ চাষের জন্য উপযুক্ত উষ্ণতা হলো উচ্চ আর্দ্রতা (৮০-৮৫%) পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধির সময়কালে আখের দ্রুত বৃদ্ধির সহায়ক।

আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন

আখ উৎপাদনের জন্য ভৌগোলিক পরিবেশ মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। যেমন- (১) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং (২)  অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।

(১) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

(ক) জলবায়ুঃ উৎপাদনের জন্য ক্রান্তীয় অঞ্চল সবচেয়ে উপযুক্ত। এক হলো উষ্ণ এবং আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল।
(খ) উষ্ণতাঃ আখ চাষের জন্যসাধারণত  সারা বছর 21°সে. থেকে প্রায় 28°সে. উষ্ণতা থাকা প্রয়োজন।
(গ) বৃষ্টিপাতঃ
আখ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ১০০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলে অর্থাৎ ১০০ সেন্টিমিটারের কম হলে অতিরিক্ত সেচ প্রদান করতে হয়।
(গ) আর্দ্রতাঃ
আখের ধারা বৃদ্ধির সময় আদ্র জলবায়ুর প্রয়োজন হয়। এবং আখ সংগ্রহের সময় রোদ্রউজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রয়োজন।
(ঘ) সামুদ্রিক বাতাসঃ সামুদ্রিক লবণাক্ত বাতাস আখের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(ঙ) কুয়াশা এবং তুষারপাতঃ 
আখ চাষের জন্য কুয়াশা ও তুষারপাত ক্ষতিকর।
(চ) মৃত্তিকাঃ
আখ চাষের জন্য উর্বর মাটির প্রয়োজন। থাক চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হলো চুন ও লবণাক্ত দোআঁশ মাটি। জমিতে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। আখ চাষের জন্য উঁচু এবং সমতল জমি প্রয়োজন।
(ছ) ভূপ্রকৃতিঃ
আখ চাষের জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য আখ চাষের জন্য উঁচু, সমতল কিংবা ঢালু জমি উপযুক্ত। জমিতে পানি জমে থাকলে আখের গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

(২) অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ

(ক) শ্রমিকঃ
আখের ছাড়া রোপন এবং আখ কাটার জন্য দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন।  ঘনবসতিপূর্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে সুলভ শ্রমিকের প্রাচুর্য আখ চাষের সহায়ক হয়েছে।
(খ) পরিবহণঃ
আখ চাষে সফল হতে হলে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা থাকতে হবে। আখ কাটার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে রস বের না করলে আখের রসের পরিমাণ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
(৩) মূলধনঃ
আকাশে ভালো ফসল পেতে হলে পর্যাপ্ত মূলধন থাকা প্রয়োজন। কারণ ফলন বেশি পেতে হলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে হলে উপযুক্ত সার ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া রোগ বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং প্রয়োজনে ফেস প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে যথেষ্ট মূলধনের প্রয়োজন।

আখ চাষের পরিচর্যা

জাত নির্বাচনঃ
আখ চাষে ভালো ফলন পেতে হলে ভালো বীজ নির্বাচন করতে হবে। যে কোন জাতের বীজ রোপন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। ভালো ফলন পেতে হলে অবশ্যই ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে। ভালো জাতের বীজ হিসেবে আপনি ঈশ্বরদী ২/৫৪, ঈশ্বরদী ১৬, ২০, ৩২-৪০, বিএসআর আই আখ ৪১-৪৪ অমৃত ইত্যাদি জাতের আখ ব্যবহার করতে পারেন। আখ চাষের জন্য ভালো জাতের আখের বীজ নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ।
বীজ শোধনঃ
আখ চাষের জন্য আখ নির্বাচন করার পরে আখ রোপনের পূর্বে অবশ্যই শোধন করে নিতে হবে। কারণ আখের চারা শোধন করে না নিলে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যার ফলে আখের ফলন কম হতে পারে এবং আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
সার প্রয়োগঃ
আখ চাষের জন্য সার প্রয়োগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিকসার প্রয়োগ না করলে ভালো ফলন হয় না। সেইসাথে সার প্রয়োগের সঠিক মাত্রা ঠিক রাখতে হয়। বেশি ফলন পেতে হলে এক হেক্টর জমিতে ইউরিয়া সার দিতে হবে ১২০-১৫০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৮০-১১০ কেজি, এমওপি দিতে হবে ১১০-১৪০ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ৫০-৬০ কেজি।

আন্তঃপরিচর্যাঃ

আখ চাষে বেশি ফলন পাওয়ার জন্য আন্তঃপরিচর্যা করা গুরুত্বপূর্ণ। আখ যেহেতু ঘাস জাতীয় ও লম্বা  ফসল তাই এগুলো লম্বা হওয়ার পরে বাতাসে পড়ে যেতে পারে। সেজন্য কয়েকটি করে আখ একসাথে বেঁধে রাখতে হবে। আখ গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে সেগুলো যদি এমনিতে ঝরে না পড়ে সে ক্ষেত্রে শুকনো বা মরা পাতাগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে অথবা কেটে ফেলতে হবে। আখের গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত আলো এবং বাতাস পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে, প্রয়োজনে মাটি আলগা করে দিতে হবে।

পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা

আখ চাষে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। আখের চারা রোপণের পর রোগ বালাই দমন এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় ফসলের ক্ষতি হবে এবং আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আখ চাষের রোগ বালাই দমন এবং প্রতিরোধের জন্য সঠিক সময় সঠিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

আখের চারার ডগার মাজরা পোকা দমন করার জন্য কার্বোফুরান গ্রুপের কীটনাশক ফুরাডান ৫ জি কিংবা কুরাটার ৫ জি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারেন। এবং কাণ্ডের পোকা দমনের জন্য কারটাপ গ্রুপের রাজেক্স ৪ জি এবং গোড়ার মাজরা পোকা দমনের জন্য ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের লরসবান ১৫ জি ব্যবহার করতে হবে। আখ চাষের জন্য অন্যতম প্রধান শত্রু হলো উইপোকা। তাই এই উইপোকা দমন করা প্রয়োজন।

উইপোকা দমন করতে আপনি ক্লোরোপাইরিফস গ্রুপের ডারসবান জাতীয় কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারেন। এছাড়া আখের জমিতে উইপোকার ঢিবি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে দিন কিংবা  ভিটাশিল্ড/লিথাল ২০ ইসি প্রয়োগ 

আখ বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরীব ফসল গুলোর মধ্যে একটি। এই পোস্টে আমরা আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন সম্পর্কে জানলাম। আপনি আখ চাষ করতে চাইলে আখ চাষের জন্য কি রকম উষ্ণতা প্রয়োজন জানার পরে এই পোস্টে বর্ণিত অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো অনুসরণ করতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url