ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয় - ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে প্রথম এবং প্রধান করণীয় হচ্ছে সতর্কতা। কেননা ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা আমাদের বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে জন্ম নেয় এবং বংশবৃদ্ধি করে।
তাই আসুন ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে জানি এবং ডেঙ্গুর প্রতিরোধে করণীয় কি তা জেনে সেই ভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে নিজেকে এবং পরিবারকে ডেঙ্গু রোগ মুক্ত রাখি।
রোগ পরিচিতি
ডেঙ্গু মূলত কীটপতঙ্গ দ্বারা বাহিত একটি সংক্রামক রোগ। আমাদের দেশে প্রায় সব এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে যে কোন বয়সের মানুষ। ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত জ্বর যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এডিস জাতীয় মশার কামড়েই ডেঙ্গু জ্বর হয়। প্রাথমিকভাবে এ রোগ সনাক্ত করা গেলে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় এবং চিকিৎসায় সেরে যায়। কিন্তু মারাত্মক হেমোরেজিক হলে বা সময়মত ও যথাযথ চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
এডিস মশা চেনার উপায়
এডিস মশা অনেকটা কিউলেক্স মশার মত দেখতে। তবে এডিস মশার গায়ে ডোরাকাটা দাগ আছে। এ মশা স্বচ্ছ পানিতে থাকতে ভালোবাসে। ফুলের টব, কৌটা, নারিকেল বা ডাবের খোসা, ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, কলস, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করে। এডিস মশা আলো-আঁধারিতে অর্থাৎ সকাল সন্ধ্যা কামড়ায়।
ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ
- শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায়।
- মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পেটে ব্যথা, মাংসপেশি এবং হাড়ে বিশেষ করে মেরুদন্ডে ব্যথা।
- মুখে অরুচি, বমি বমি ভাব ও বমি করা।
- চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, চোখে রক্তক্ষরণ, চোখে রক্ত জমাট বাঁধা।
- লালচে বা কালো রঙের পায়খানা করা।
- নাক-মুখ, দাঁতের মাড়ি ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্তপাত হওয়া।
- রক্তচাপ হ্রাস, নাড়ীর গতি দ্রুত হওয়া।
- ছটফট করা, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট বা অজ্ঞান হয়ে পড়া।
- শরীরে হামের মতো দানা দেখা দিতে পারে।
- মারাত্মক হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে শরীরের অন্তঃস্থিত বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
- পেটে ও ফুসফুসে পানি জমতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যা করবেন
- ডেঙ্গু জ্বর হলে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ স্বাস্থ্য কর্মীকে খবর দিবেন বা ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
- জর যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শক্রমে খেতে পারেন।
- রোগীর মাথায় পানি দিন বা ভেজা কাপড় দিয়ে মাঝে মাঝে গা মুছে দিন।
- রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও স্বাভাবিক খাবার খেতে দিন।
- জ্বর অনেক বৃদ্ধি পেলে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
- ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল, টিনের কৌটা, গাড়ির পরিত্যাক্ত টায়ার, ভাঙ্গা কলস, ডাব বা নারিকেল খোসা, ফাস্টফুড এর কন্টেইনার, এয়ার কন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের তলায় জমে থাকা পানি সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে ফেলে দিন।
- অব্যবহৃত পানির পাত্র ধ্বংস করে ফেলুন অথবা উল্টে রাখুন যাতে পানি জমতে না পারে।
- যেসব স্থানে মশা জন্মায় সেইসব স্থানে পানি জমতে দিবেন না।
- বাড়ির ভেতর আশপাশ ও আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্ক নয়, মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করুন, মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মুক্ত থাকুন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url