বিএড কোর্স কি - বি এড করতে কত টাকা লাগে

 

আপনি যদি মাধ্যমিক পর্যায়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হয়ে থাকেন তাহলে বি এড কোর্স  সম্বন্ধে জানা আপনার জন্য অত্যন্ত  জরুরী। বিএড কোর্স কি, বি এড কোর্স কেন করা দরকার আপনার মনের মধ্যে যদি এই সকল প্রশ্নগুলো উঁকি দিয়ে থাকে তাহলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ এখানে আপনি পাবেন বি এড কোর্সের বিস্তারিত। 

বি এড কোর্স কি এবং কেন

মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষকের জন্য বি এড কোর্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই কোর্সটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণমূলক কোর্স। সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক কোর্স। তবে বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক না হলেও অনেকটাই জরুরী এবং দরকারি। কেননা এই কোর্সের ওপরে নির্ভর করে একটি বেতন স্কেল।

মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির বা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বি এড কোর্সের এর গুরুত্ব ও  প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বি এড কোর্সের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোর্স শেষে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট অধিদপ্তর বরাবর জমা দিলে বেতন স্কেল গেল বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নেয়া যাক বি এড কোর্স এর বিস্তারিত। 

বি এড কোর্স কি

বি এড এর পূর্ণরূপ হল ব্যাচেলর অব এডুকেশন। এটি শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বি এড কোর্স টি মূলত তাদের জন্যই যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান অথবা যারা শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এই কোর্সটি দুই ধরনের রয়েছে। একটি হলো বিএড (অনার্স) এবং অপরটি বি এড (এক বছর মেয়াদী) কোর্স। বিএড অনার্স শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী, অন্যদিকে বিএড এক বছর মেয়াদী কোর্স টি হল পেশাগত বা প্রফেশনাল ডিগ্রি।

এক বছর মেয়াদী বি এড কোর্স মূলত মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের কোর্স। এটি একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি যা অর্জনের মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষক তার ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণ, শিক্ষাদানের পদ্ধতি এবং কৌশল উন্নয়নের মাধ্যমে একজন দক্ষ শিক্ষক হিসেবে গড়ে ওঠে। তবে এই কোর্সে শুধু শিক্ষকরা যে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বিষয়টি তেমন নয়। যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান তারা চাইলে শিক্ষক হওয়ার আগেই এই কোর্সটি সম্পন্ন করে রাখতে পারেন।

বিএ ড কোর্স কেন করা দরকার

আমাদের বি এড কোর্সের প্রয়োজনীয়তা বহুমাত্রিক। এই বহুমাত্রই প্রয়োজনীয়তা থেকে তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরী যারা শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত এবং যারা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান। যারা বি এড এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেছেন তারা শিক্ষক বিষয়ক পেশায় সব সময় অগ্রাধিকার পান পাশাপাশি শিক্ষকতা পেশায় বিএড কোর্সের গুরুত্ব বর্ণনাতীত।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার সাথে সাথেই এক বছর মেয়াদে বিএড কোর্স করার জন্য সুপারিশ করা হয়। আবার যারা বেসরকারি শিক্ষক রয়েছেন তারা নিয়োগের সময় বিএড কোর্স করা না থাকলে দশম গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। প্রারম্ভিক পর্যায়ে তাদেরকে ১১ তম গ্রেডে যোগদান করতে হয়।

যোগদান করার পর স্ববেতনেই প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে বিএড কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। বিএড কোর্স সম্পূর্ণ হয়ে গেলে কর্তৃপক্ষের কাছে সনদ দাখিল করলে দশম গ্রেডে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ হয়। যেখানে বেতন স্কেল এক ধাপ বৃদ্ধি পায়। তাই এক বছর মেয়াদী বিএড কোর্স শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রেড বা বেতন স্কেল বৃদ্ধির জন্য কোর্স টি করা দরকার।

বি এড ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএড ভর্তি বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত কলেজ সমূহে সার্বজনীনভাবে বি এড ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় নভেম্বর/ডিসেম্বরে। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের নিজস্ব সময়ে।

প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড কোর্সের জন্য তাদের নিজস্ব কোর্স প্লান রয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সের মেয়াদ হয় সাধারণত ১ বছর এবং অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য করছে এর মেয়াদ হয় ২ বছর। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সের মেয়াদ ১ বছর (জানুয়ারি-ডিসেম্বর)।

বি এড ভর্তির যোগ্যতা

বি এড কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে আবেদন করতে যে সকল যোগ্যতার প্রয়োজন হয় তা নিম্নরূপঃ

১। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত ডেপুটেশনপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সমূহে বিএড কোর্সে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তাই তাদের জন্য ডেপুটেশন প্রাপ্তির অফিস আদেশ-ই তাদের যোগ্যতার মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২। অন্যান্য আবেদনকারীদের জন্য বি এড কোর্সে আবেদনের যোগ্যতা ও শর্তাবলী হলো আবেদনকারীকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়/ইউজিসি স্বীকৃত যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ বছর মেয়াদী স্নাতক (পাস)/ স্নাতক (সম্মান) অথবা ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় সনাতন পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৪৫% নম্বর অথবা গ্রেডিং ও ক্রেডিট পদ্ধতিতে ন্যূনতম সিজিপিএ ২.২৫ পেতে হবে।

বি এড করতে কত টাকা লাগে

আপনি যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজসমূহে ১ বছর মেয়াদী বি এড কোর্স করতে চান তাহলে প্রাথমিকভাবে আবেদনের জন্য প্রয়োজন হবে প্রাথমিক আবেদন ফি বাবদ ৩০০/- (তিনশত) টাকা। প্রাথমিক আবেদনের পর আপনি যদি মেধা তালিকায় স্থান পান অর্থাৎ ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হন তাহলে ভর্তির সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কলেজে আরো কিছু ফি জমা দিতে হয়।

বি এড কোর্সের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত ফি (রেজিস্ট্রেশন ফি, ক্রিড়া ও সংস্কৃতি ফি, বিএনসিসি ফি, রোভার স্কাউট ফি) হলো ১,২৩৫/- (এক হাজার দুইশত পঁয়ত্রিশ) টাকা যা সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তির সময় জমা দিতে হবে।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কলেজকর্তৃক নির্ধারিত ফি ভর্তির সময় জমা দিতে হবে। এই ফি সংশ্লিষ্ট কলেজ নির্ধারণ করে থাকে। তাই এই ফি এর পরিমাণ কলেজভিত্তিক ভিন্ন হয়। তবে ফি এর পরিমাণে খুব বেশি তারতম্য হয় না, কাছাকাছি হয়। কলেজের ফি এর পরিমাণ সাধারণত ৩,০০০/- থেকে ৪,০০০/- এর মধ্যে হয়।

এবারে আসি বিএড এর ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপ (Form Fill-up) এর খরচে। বিএড কোর্সটি ০১ বছর মেয়াদে হলেও এটি দুইটি সেমিস্টারে বিভক্ত- ১ম সেমিস্টার এবং ২য় সেমিস্টার। তাই এর ফরম ফিলাপ (Form Fill-up) এবং পরীক্ষা দুই টার্মে হয়ে থাকে। ফার্স্ট টার্ম অর্থাৎ ১ম সেমিস্টারের ফরম ফিলাপের (Form Fill-up) জন্য আনুমানিক ৪০০০-৪৫০০ টাকা এবং ২য় সেমিস্টারের ফরম ফিলাপের (Form Fill-up) জন্য ৩৫০০-৪০০০ টাকা খরচ হয়। এই খরচের মধ্যে পরীক্ষার প্রতিপত্র ফ্রি, কেন্দ্র ফি, প্রবেশপত্র ফি এবং সনদপত্র ফি সহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত।

বি এড কলেজের তালিকা

আমরা অনেক সময় বিএড কোর্স করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর প্রতিষ্ঠান নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু দ্বিধা দ্বন্দ্বে থাকি। কোন প্রতিষ্ঠানে বিএড করলে ভালো হবে, কোন সার্টিফিকেট প্রদর্শন করলে বিএড স্কেল পাওয়া যাবে এই সকল প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। বাংলাদেশে প্রায় শতাধিক  সরকারি এবং বেসরকারি বৈধ বি এড কলেজ রয়েছে যার অধিকাংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত।

এই কলেজগুলোর মধ্যে অনেকগুলো কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ও নীতি না মানার কারণে অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় বেসরকারি শিক্ষকদের  বিএড স্কেল প্রাপ্তিতে  প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। তাই আপনি যদি দ্বিধাহীন ভাবে বিএড স্কেল প্রাপ্তির বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চান তাহলে নিম্নোক্ত সরকারি বিএড কলেজ সমূহে বিএড কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারেন।

  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, ফরিদপুর।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, বরিশাল।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ (পুরুষ), ময়মনসিংহ।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ (মহিলা), ময়মনসিংহ।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, রংপুর।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, পাবনা।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, রাজশাহী।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, কুমিল্লা।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, ফেনী।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, খুলনা।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, যশোর।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম।
  • সরকারি টিচার্স্ ট্রেনিং কলেজ, সিলেট।

পরিশেষে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো যে, যেহেতু উপরিউক্ত সরকারি কলেজ সমূহের বিএড কোর্স নিয়মিত কোর্স, সেহেতু ক্লাস, পরীক্ষা সহ অন্যান্য কোর্স ভিত্তিক কার্যক্রমে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। আপনার প্রয়োজনে প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিএড কোর্স এ ভর্তি হন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • সাব্বির হোসেন
    সাব্বির হোসেন May 10, 2024 at 8:23 AM

    আসসালামু আলাইকুম। আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে বিএসসি(B.Sc.) তে শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত।২০২৪ এই ইনশাল্লাহ বিএসসি সম্পূর্ণ হবে আমার। আমার প্রশ্ন হচ্ছে

    ১. আমি কি বি.এড. ১ বছরের কোর্সটাতে ভর্তি হতে পারব?
    ২. কোর্স শেষে আমি কি সরকারি/বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারব?
    ৩. আমি বিদ্যালয়ের গণিত/পদার্থবিজ্ঞান /রসায়ন সহ অন্যান্য বিষয়গুলোর যেকোনোটির শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নিতে পারব?

    ৪. আমি কি বিসিএস পরীক্ষা পূর্বক বিসিএস( শিক্ষা) ক্যাডারের জন্য বিবেচিত হতে পারব?

    উত্তর গুলো দিলে খুব উপকৃত হব।ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url