ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। অতিরিক্ত চুল ঝরে পড়া, চুল রুগ্ন ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া, মাথার ত্বকে বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন মূলত খুশকি দায়ী।
ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায়

সূচিপত্রঃ- ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায়


খুশকিতে ভোগেননি এমন কোন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু এই খুশকি সম্পর্কে আমরা অনেকেই অসচেতন। এবং খুশকি কে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখিনা। মেয়েদের চাইতে পুরুষরা এই খুশকির ক্ষেত্রে একটু বেশি অবহেলা দেখায়। যার ফলে কখনো কখনো আপনার মাথায় বড় রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খুশকি সাধারণত বায়ু দূষণ, আবহাওয়ার পরিবর্তন এমনকি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। আজকে আমরা ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। এই উপায় গুলো জানা থাকলে ছেলেরা খুব সহজে খুশি থেকে দূরে থাকতে পারবে।

খুশকি কি

খুশকি কোন রোগ নয়। খুশকি হল মাথার একটি অবস্থা যেখানে মৃত কোষ গুলো জমে থাকে। খুশকি সাধারণত মাছের আঁশের মতো দেখা যায়। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণের ফলে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। মাথার জীবিত কোষগুলো মারা যাওয়ার পর কোন কারনে মাথাতেই অবস্থান করলে খুশকি দেখা দেয়।
খুশকি অনেক সময় আমাদেরকে বিব্রতকর এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। যেহেতু ছেলেরা এই খুশকি সম্পর্কে একটু বেশি অসচেতন সেহেতু ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা আবশ্যক।

খুশকির সাধারণ লক্ষণ

  • মাথার ত্বকে বা স্ক্যাল্পে সাদা ও চিটচিটে মরা চামড়া গুড়ার মত দেখায়।
  • খুশকি গুলো সাধারণত আইশের মত হয়ে থাকে এবং মাথার ত্বক প্রচন্ড চুলকায়।
  • প্রদাহ নাও থাকতে পারে অথবা মৃদু প্রদাহ হতে পারেঅ
  • চোখের ভ্রূ, চোখের পাতা এবং মাথার পিছনে খুশকি গুলো ঝরে পড়তে পারে।
খুশকি যেহেতু মাথার ত্বকে বা কালকে হয়ে থাকে তাই খুশকি গুলো ঝরে পড়ে কাঁধের ওপরে জমা হয়ে থাকে। সিবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে মিশ্রিত সেবামের পরিমাণ বেড়ে গেলে অথবা জমে গেলে মাথার ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়।

খুশকির প্রধান কারণ

  • প্রদাহসহ তৈলাক্ত ভাব এবং প্রচন্ড চুলকানি হয়।
  • চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করলে খুশকি হতে পারে।
  • ম্যালাসেজিয়া নামক ছত্রাকের সংক্রমণ হলে খুশকি হতে পারে।
  • ত্বক খুশকো হলে খুশকি হয়ে থাকে।
  • অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে খুশকি হয়।
  • পারকিন্সনের রোগ (স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি) এবং এইচআইভি সংক্রমণ হলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায়

নিমের পাতাঃ খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে নিমের পাতা খুব সুন্দর কাজ করে। নিমের পাতায় অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা মাথার স্ক্যাল্পে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ছেলেদের খুশকি দূর করার জন্য সপ্তাহে অন্তত দুইতিন দিন নিমের তেল মাথার চুল এবং ত্বকে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। অথবা নিমের পাতা পরিমাণ মতো পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন।
মেথিঃ খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে মেথি খুব কার্যকর। নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে মেথি ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে মেথি গুলো থেকে ভালোভাবে বেটে মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এবং গোসলের পূর্বে ছেঁকে নেওয়া পানি মাথার চুলে লাগান। সপ্তাহে অন্তত দুই তিন বার এই পদ্ধতিতে মেথি ব্যবহার করুন খুশকি দূর হয়ে যাবে।
মেথির প্যাকঃ দুই টেবিল চামচ পরিমাণ মেথি এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে সেই মেথি ছেঁকে ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিন। মেথি বাটার সাথে এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে ভালো করে ফেটে নিন।
এবং এই প্যাকটি মাথায় ভালোভাবে মালিশ করে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করুন। এইভাবে নিয়মিত মেথি প্যাক ব্যবহারের ফলে খুশকি দূর হওয়ার সাথে সাথে মাথা চুলকানিও দূর হবে।
অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা তে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রয়েছে। এই উপাদানগুলো ত্বকের ফাঙ্গাস দূর করতে এবং খুশকি মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। প্রথমে এলোভেরার পাতা থেকে জেলিকে আলাদা করে নিন। জেলিকে ভালোভাবে ফেটে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট মাথার চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। বিশ মিনিট অপেক্ষা করে সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে সম্পূর্ণ মাথা ভালো ভাবে পরিষ্কার করুন।
নারকেল তেলঃ চুলকে সুন্দর রাখতে তেলের কোন বিকল্প হয় না। রাসায়নিক উপাদান মুক্ত নারিকেলের তেল খুশির সমস্যা দূর করতে এবং মাথার ত্বককে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে প্রতিহত করতে খুব কার্যকর। মাথায় নারিকেলের তেল ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া ময়শ্চারাইজড হয়, খুশকি কমে এবং স্ক্যাল্পে ছত্রাক এবং ফাং গাছের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। দ্রুত উপকার পেতে সপ্তাহে অন্তত দুইবার চুলের গোড়ায় নারিকেল তেল ব্যবহার করুন। আপনি চাইলে এই নারিকেল তেল হালকা গরম করেও মালিশ করতে পারেন।
পেঁয়াজের রসঃ ছেলেদের খুশকি দূর করার জন্য পেঁয়াজের রসের ব্যবহার তুলনামূলক কার্যকরী। পরিমাণ মতো পেঁয়াজ ভালোভাবে বেটে পরিমাণ মতো পানিতে মিশিয়ে নিন।
পেঁয়াজের রস মিশানো পানি ভালোভাবে মাথার চুলে বিশেষ করে মাথার ত্বকে মালিশ করুন। এই পদ্ধতিতে সপ্তাহে প্রায় দুইবার পেঁয়াজের রস মাথার চুল এবং ত্বকে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
টকদইঃ টক দই খুশকির বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। ছেলেদের খুশকি দূর করতে আপনি টক দই ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণ মতো টকদই নিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। দশ মিনিট অপেক্ষার পরে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রসঃ লেবুর রসও মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। দুই টেবিল চামচ লেবুর রস পরিমাণ মত পানিতে মিশিয়ে নিন। এরপর রস মেশানো পানি মাথার স্ক্যাল্পে এবং চুলে ভালোভাবে মালিশ করুন। এভাবে দুই থেকে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করুন। পরিশেষে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই বার লেবুর রস নিয়মিত ব্যবহার করুন। নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহারের ফলে আপনার খুশকি দূর হবে।
রিঠাঃ চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে, চুলকে সাইনি এবং সিল্কি ও সফট রাখতে রিঠার জুড়ি মেলা ভার। খুশকি সমস্যা দূর করতে এই রিঠার কার্যকারিতা কম নয়। রিঠা পাউডার পানিতে ভিজিয়ে এক ঘন্টা মত রেখে দিন। আপনি রিঠা সিদ্ধ পানীয় ব্যবহার করতে পারেন। রিঠা পাউডার ভেজানো পানি মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত দুইবার রিঠা পাউডার ভেজানো পানি অথবা রিঠা সিদ্ধ পানি ব্যবহার করলে খুশকির ক্ষেত্রে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
অ্যাসপিরিনঃ শুনতে অবাক মনে হলেও ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট এর ব্যবহার অন্যতম। দুইটি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট ভালোভাবে গুড়া করে নিয়ে এর সাথে পরিমাণ মতো শ্যাম্পু মেশান। আপনার তৈরি করা পেস্টটি ভালোভাবে চুলে এবং মাথার ত্বকে ব্যবহার করুন। ভালোভাবে মেসেজ করে দুই-তিন মিনিট রেখে দিন। এরপর সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে চুল এবং মাথার ত্বক ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। এই পদ্ধতিটি অবশ্যই গোসলের আগে করার চেষ্টা করবেন।
বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডার ব্যবহার খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সাথে পরিমাণ মতো শ্যাম্পু মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। এই পেস্টটি আপনার চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন।
১০ মিনিট রেখে দেওয়ার পরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এক্ষেত্রে শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। প্রয়োজনে পরের দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এভাবে কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার করুন খুশকি থেকে মুক্তি পাবেন। বেকিং সোডার ব্যবহার খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে বেশ কার্যকর।
অলিভ অয়েলঃ অনেক সময় মাথার ত্বক শুষ্ক থাকার কারনে খুশকি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে খুশকি সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল প্রয়োজনে কুসুম গরম করে নিতে পারেন। অলিভ অয়েল মাথার চুল বিশেষ করে মাথা তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর একটি টাওয়েল গরম পানিতে ভিজিয়ে মাথা মুড়িয়ে রাখুন। এভাবে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট রেখে দেওয়ার পর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে দিয়ে ফেলুন।

খুশকি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা অনেকেই সমাধান খুঁজি। কিন্তু হয়তো আমরা অনেক সময় সঠিক সমাধান না পাওয়ার কারণে খুশকির উপদ্রব থেকে রেহাই পায় না। তাই আজকে আমরা ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানলাম। আশা করি খুশকি দূর করার উপায় গুলো জানার পরে আপনারা খুশকির ফলে তৈরি হওয়া অপ্রতিকর অবস্থা থেকে রেহাই পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url