প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন

আপনি কি প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন সেটা জানতে চান? বর্তমানে বিশেষ করে শহরের মানুষের খুশকির সমস্যা অনেক। তাই প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করার কিছু টিপস অপনাদের সাথে শেয়ার করবো। মাথা থেকে খুশকি দূর করার জন্য বেশ কিছু প্রাকৃতিক নিয়ম রয়েছে। 

প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন

যে নিয়ম গুলো পালন করলে খুশকি দূর হওয়ার সহ চুল পড়া, চুল ঝরে পড়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া এবং অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে।

সূচিপত্রঃ- প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন


গ্রামের মানুষের চাইতে শহরের মানুষ খুশকি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। শহরের বাতাসে অতিরিক্ত ধুলাবালি এবং ডাস্ট থাকার কারণে সেগুলো সহজেই মাথায় জমে খুশকি তৈরি করে। খুশকি সমস্যা দূর করার জন্য বা খুশকি প্রতিরোধ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক নিয়ম রয়েছে। তাই আপনাদের জেনে রাখা উচিত প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন।

খুশকি আসলে কী

প্রাচীন যুগে বিশেষ করে গ্রামের মানুষ খুশকি কে ‘মরামাস’ বলতেন। প্রকৃতপক্ষে খুশকি হল মাথার ত্বকের মৃত কোষ। প্রতিটি কোষ তার আয়ুকাল শেষ হলে মারা যায়। সে মৃত কোষ কোন কারনে মাথায় থেকে গেলে সেগুলোই খুশকি আকারে দেখা দেয়।
খুশকি হওয়ার ফলে মাথার ত্বক প্রচন্ড চুলকায় এবং চুলকানোর ফলে সেই মৃত কোষগুলো চুলের উপরে উঠে আসে এবং দেখা যায়। ভাই চিরুনি ব্যবহার করলে বা চুলকালে সেই কোষগুলো ঝরে পড়ে কাঁধের উপরে বা জামার উপরে পড়ে। এবং এই খুশকি একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে।

যেসব কারণে খুশকি হয়

অতিরিক্ত ময়লাঃ মাথা এবং মাথার চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে খুশকি হতে পারে। যে সকল মানুষ প্রতিনিয়ত বাইরে যান বা ধুলাবালিযুক্ত এলাকায় চলাফেরা করেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি।
ফাঙ্গাসঃ অনেক সময় মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসের আক্রমণের ফলে খুশকি হয়ে থাকে। অনেকদিন ধরে মাথায় সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার না করার ফলে মাথায় ফাঙ্গাস জমে খুশি হয়।
তৈলাক্ত ত্বকঃ মাথার ত্বক তৈলাক্ত হওয়ার কারণেও খুশি হতে পারে। অথবা অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলেও খুশকি দেখা দেয়।
নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারঃ মাথার ত্বক এবং চুল খুবই অনুভূতি প্রবল। অনেক সময় নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে খুশকি দেখা দেয়। আপনি যে পণ্যটি ব্যবহার করছেন সেটি আপনার ত্বক এবং চুলের সঙ্গে স্যুট করে কিনা সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
বংশগত কারণঃ কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রেও খুশকি হতে পারে। খুশকির অন্যতম কারণ হতে পারে বংশগত কারণ। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মানসিক চাপঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত ক্লান্তি খুশকির অন্যতম কারণ।

প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন

খুশকির সমস্যা বর্তমানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে খুশকির উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায়। চলুন প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন সেই উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
লেবুর রসঃ প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে লেবুর রসের ব্যবহার অন্যতম। খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে লেবুর রসের ব্যবহার প্রাচীন। তাছাড়া অন্যান্য জিনিসের তুলনায় লেবুর দাম কম এবং প্রায় সব জায়গাতেই লেবু পাওয়া যায়। তাই এসব দিক থেকে লেবু ব্যবহার করা উত্তম। লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড আপনার মাথার ত্বকের অতিরিক্ত সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি লেবু আপনার শরীরের পিএইচ এর মাত্রা কে ঠিক রেখে মাথার চুলকানি কমায়। ২ টেবিল চামচ লেবুর রসের সাথে এক টেবিল চামচ পানি অথবা নারিকেলের তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। ৮-১০ মিনিট রেখে দেওয়ার পরে শ্যাম্পু বা সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
কর্পূর ও নারকেল তেলঃ প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করার জন্য আপনি কর্পূর ও নারিকেলের তেলের সংমিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। শারীরিক বিভিন্ন পরিচর্যার ক্ষেত্রে গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে নারিকেল তেলের ব্যবহার অনেক। হাফ কাপ নারিকেল তেলের সাথে এক টেবিল চামচ কর্পূর ভালোভাবে মিশিয়ে প্রয়োজন মত মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ও সকালে উঠে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। একটানা ১৫ দিন ব্যবহারের পর ধীরে ধীরে ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে ফেলুন।
সতর্কতা- মাথায় ক্ষত বা প্রদাহ থাকলে কর্পোর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। অন্যথায় ক্ষতস্থানে কর্পূর প্রবেশ করে সারা শরীর ছড়িয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে।
মেথির তেলঃ প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে মেথির ব্যবহার বেশ কার্যকরী। মেথি চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। পরিমাণ মতো মেথি পানিতে ভিজেয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে মেথি ভালোভাবে ছেঁকে বেটে নেই। এক টেবিল চামচ বাটা মেথির সাথে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে গরম করে নেন। কুসুম গরম থাকা অবস্থায় এই মিশ্রণটি মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। গোসলের সময় সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে সমস্ত মাথা ভালো ভাবে নিয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার খুশকি দূর হয়ে যাবে।
নিমপাতাঃ খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে নিমপাতা খুব কার্যকর। নিম পাতার ঔষধি গুনও অনেক। প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিম পাতা বা নিম গাছের উপকারিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা। নিম পাতায় এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে মাথার খুশকি কমাতে সাহায্য করে। নিম পাতা ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিন। তৈরি পেস্ট মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। অথবা এক মুঠো নিমপাতা পরিমাণ মতো পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে গোসলের সময় ব্যবহার করুন।
টি ট্রি অয়েলঃ বর্তমানে প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করতে টি ট্রি অয়েলের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তেলে অ্যান্টি ফাউন্ডার এবং অ্যান্টিব্যাকটিক্যাল গুন রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই তেল সুলভ মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। মাথার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার ক্ষেত্রে এই তেলের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য ভালো কাজ করে। এছাড়া একজিমার কারণে খুশকি হলে সে ক্ষেত্রে এই তেল ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। একজিমা ভালো করার ক্ষেত্রে জিংক অক্সাইড ও ক্লোরেটাসোন বিউটারেটর তুলনায় টি ট্রি অয়েলের কার্যকারিতা অনেক বেশি। খুশকি দূর করার জন্য মাথার চুল এবং মাথার ত্বকে এই তেল ভালোভাবে মালিশ করে গোসলের সময় ধুয়ে নিন।
অ্যালোভেরাঃ খুশকি দূর করার জন্য এলোভেরার ব্যবহার প্রচুর। এলোভেরাতে এন্টিব্যাকটিরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে যা খুশকি জনিত চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে বিদ্যমান অ্যাডাপ্টোজেন উপাদান রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। খুশকি দূর করা, চুলের শুষ্ক ভাব দূর করা, চুলকে কোমল করা এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার ক্ষেত্রে এলোভেরা ও কার্যকর।
পরিমাণ মতো অ্যালোভেরা অলিভ অয়েলের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেজ মাথার চুল এবং ত্বকের ভালোভাবে মালিশ করে পনেরো বিশ মিনিট রেখে দিন। তারপর সাবান মাসে আমি পথ বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে নিয়মিত ব্যবহার হলে আপনি খুশকি দূর হবে।
আপেল সাইডার ভিনেগারঃ চুলের খুশকি দূর করতে ভিনেগারের ব্যবহার ও কম নয়। বর্তমানে ভিনেগার জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য একটি পণ্য। মাথার ত্বকের ফাঙ্গাস দূর করার জন্য এই ভিনেগার এন্টিফাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে। ৩ঃ১ অনুপাতে পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট ব্যবহারের পূর্বে মাথা চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নিয়মিত এই পেস্ট ব্যবহার করুন। আপনার খুশকি দূর হবে এবং চুল ঝকঝকে এবং সফট হবে। ধীরে ধীরে ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে।
আমলকিঃ চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আমলকির ব্যবহার অতি প্রাচীন। মাথার চুল এবং ত্বকের সুরক্ষা প্রদানের জন্য সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা তৈলাক্ত ভাব হ্রাস করতে সাহায্য করে আমলকি। আমলকিতে বিদ্যামান ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ডান্ড্রিয়াম  ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণ থেকে চুল এবং ত্বককে রক্ষা করে। সরাসরি আমলকির রস মাথার চুল এবং ত্বকে মালিশ করতে পারেন। অথবা দুই টেবিল চামচ আমলকি রস এর সাথে এলোভেরা মিশিয়ে পেস্ট করে মাখতে পারে। ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে নিবে। ৩ থেকে ৪ দিন পর পর এইভাবে ব্যবহার করুন।
টক দইঃ প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর কোর জন্য টক দই এর ব্যবহার সহজ এবং বহু প্রচলিত। খুশকি থেকে চুল এবং মাথাকে রক্ষা করতে টক দই য়ের কার্যকারিতা অনেক। টক দইয়ে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান  রয়েছে। এই  এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকের ফাঙ্গাস দূর করতে সাহায্য করে। এক কাপ দুই ভালোভাবে ফেটে পেস্ট করে নেন। তৈরি কিন্তু পেস্ট মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। এভাবে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। অপেক্ষার পর সাবান, শ্যাম্পু বা কন্ডিশন দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নেয়। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এইভাবে ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার চুল খুশকি মুক্ত এবং ঝরঝরে হবে।
জলপাই তেলঃ প্রাকৃতিক নিয়মে খুশকি দূর করতে জলপাইয়ের ব্যবহার বা জলপাই তেলের ব্যবহার সহজ এবং উপকারী। জলপাই বিভিন্ন দিক দিয়ে শরীরের জন্য উপকারী। এছাড়াও জল পাড়ে ময়শ্চারাইজার কখন রয়েছে। মাথায় মেলাসেজিয়া  ছত্রাকের উপস্থিতির কারণে সাধারণত খুশকি হয়ে থাকে। এই ছত্রাকের পরিমাণ বেড়ে গেলে খুশকি হয়ে যাবে। তবে জলপাই তেল ব্যবহার করলে অবশ্যই সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত মাথা এবং মাথার চুল পরিষ্কার করতে হবে।

প্রতিদিনের ঘটনাগুলোর মধ্যে, চুলের খুশকি, চুল ভেঙ্গে যাওয়া, চুল ঝরে পড়া এগুলো খুবই স্বাভাবিক। এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরিচর্যার বিকল্প নেই। আজকে আমরা প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি আপনাদের খুশকি দূর করবেন এই প্রাকৃতিক নিয়মগুলো জানা থাকলে খুশকি সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। তবে উপরের প্রাকৃতিক নিয়ম গুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে কোনটি আপনার ত্বক এবং চুলের জন্য উপযুক্ত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url