খুশকি বেশি হওয়ার কারণ
খুশকি বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে হলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহ পড়ুন। আজকে আপনাদেরকে জানাবো খুশকি বেশি হওয়ার কারণ। খুশকি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। সে কারণগুলোর মধ্যে খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি এই সম্পর্কে আমাদের সকলের জানা উচিত।
বিশেষ করে শীতকালে বিড়ম্বনা গুলোর মধ্যে খুশকি অন্যতম। খুশকি ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা। তবে এই খুশকি শরীরের জন্য তেমনটা ক্ষতিকারক নয়।
সূচিপত্রঃ- খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি?
- ভূমিকা
- খুশকি কি
- খুশকি বেশি হওয়ার কারণ
- খুশকি বেশি হওয়ার প্রধান কারণ
- খুশকি বেশি হওয়ার অন্যান্য কারণ
- উপসংহার
খুশকি প্রায় প্রতিটি মানুষের একটি সাধারন সমস্যা। খুশকির কারণে মাথায় প্রচন্ড চুলকানি এবং নিয়মিত চুল ঝরে পড়ে। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে এক ধরণের ফাঙ্গাস বা ছত্রাক এর আক্রমণের কারণে খুশকি হয়ে থাকে। মাথার চুল যেমন একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ একটি চুল ঝরে পড়ে সেখানে নতুন চুল গজায়। মানুষের শরীরের কোষের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। মাথার কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়ে মারা যায় এবং সেই কোষগুলো উঠে যায়। সেখানে নতুন কোষ জন্মায়। কিন্তু এই মৃত কোষগুলো যদি ঝরে না পড়ে সে ক্ষেত্রে মাথায় প্রচন্ড চুলকানি হয় এবং মাছের আঁইশের মতো কোষ গুলো উঠতে থাকে এই অবস্থাকে খুশকি বলা হয়। আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব খুশকি বেশি হওয়ার কারণ।
খুশকি কি
খুশকি হল মাথার ত্বকের মৃত চামড়া। মানুষের মাথার ত্বকে ম্যালাসেজিয়া নামক একটি অণুজীব সবসময় উপস্থিত থাকে। মাথার ত্বকে তেলের উপস্থিতির কারণে ম্যালাসেজিয়া অলিক অ্যাসিড তৈরি করে যা মাথার ত্বকে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এই অলিক অ্যাসিডের সাথে ডার্মিসের সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। যখন এই ঘটনাটি ঘটে তখন আমাদের মাথায় খুশকি দেখা দেয়। যদিও প্রকৃত অর্থে সবকিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, আবহাওয়া বা মানসিক চাপের মতো গভীর সমস্যার কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
খুশকি বেশি হওয়ার কারণ
মাথায় খুশকি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। খুশকি হওয়ার সাধারণ কারণ গুলোর মধ্যে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা ত্বকের তৈলাক্ত ভাব অন্যতম। সাধারণত মেলাসেজিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমণের ফলে মাথায় খুশকি সৃষ্টি হয়। এই মেলাসেজিয়া ছত্রাকটি সবসময় মানুষের মাথার খুলিতেই বসবাস করে। মেলাসেজিয়া নামক ছত্রাকটি নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে।
খুশকি বেশি হওয়ার প্রধান কারণ
পানির সমস্যাঃপানির সমস্যার কারণে অনেক সময় আমাদের মাথায় খুশকি হতে পারে। গোসলের পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্তভাবে বেশি থাকলে মাথার ত্বক খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে পড়ে এবং কি দেখা দিতে পারে।
ভেজা চূল তাড়াতাড়ি না শুকালেঃ
খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেগুলোর মধ্যে ভেজা চুল তাড়াতাড়ি না শুকানো অন্যতম। ভেজা অবস্থায় অনেকক্ষণ চুল বেঁধে রাখা উচিত নয়। এজন্য গোসল করার পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালোভাবে মুছে শুকিয়ে নেয়া উচিত। প্রয়োজনে দ্রুত চুল শুকানোর ক্ষেত্রে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যান বা প্রকৃতির বাতাসে শুকিয়ে নেয়া ভালো।
ফাঙ্গাসঃমানুষের মাথায় খুশকি হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। মাথার ত্বকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পুরাতন মৃত কোষ ঝরে পড়ে এবং নতুন কোষ জন্মায়। কিন্তু এই কোষগুলো ঝরে না পড়ে যদি মাথায় জমে থাকে তাহলে ফাঙ্গাস দ্বারা সংক্রমিত হয়ে খুশকি দেখা দেয়।
ম্যালেসেজিয়াঃ
মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের অণুজীব বা ছত্রাক থাকে। মাথার ত্বকে এই ছত্রাকের বৃদ্ধি ঘটলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। কারণ এই ম্যালেসেজিয়া শরীরের ত্বক থেকে তেল শুষে নেয়। যার ফলে কোষ গুলো মারা যায় এবং মৃত কোষগুলোই চুলের গোড়াতে খুশকি হিসেবে দেখা যায়।
এলার্জিঃখুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেই কারণগুলোর মধ্যে এলার্জি আরেকটি। যারা এলার্জিতে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে খুশি হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এবং ত্বকের পরস্পর বিপরীত ক্রিয়ার কারণে খুশকি হতে পারে।
ঋতু পরিবর্তনঃ
খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সে কারণগুলোর মধ্যে ঋতু পরিবর্তন একটি সাধারণ কারণ। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেক সময় খুশকি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শীতকালে খুব ঠান্ডা এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এবং ইতিমধ্যে যাদের খুশকি রয়েছে তাদের ওপর আরো বেশি প্রভাব পড়ে।
সেবোরিয়াঃমাথার ত্বকে খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো Seborrheic Dermatitis. এই রোগের কারণে ত্বক রুক্ষ, শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যায়। যার ফলে খুশকি দেখা যেতে পারে।
হরমোন ভারসাম্যহীনতাঃখুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেই কারণগুলোর মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা একটি সাধারণ কারণ। হরমোনগুলো মাথার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি উৎপাদন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কিসে কারণগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও কিছু কিছু রোগ রয়েছে যেমন- পারকিন্সন ডিজিজ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি এ সকল রোগে যারা ভোগেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতাও বেশি লক্ষ্য করা যায়।সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদেরমধ্যে ১০.৬% রোগীর খুশকির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
খুশকি বেশি হওয়ার অন্যান্য কারণ
প্রকৃতপক্ষে খুশকি কোনো রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। সাধারণত মাথার চুলের গোড়ায় অর্থাৎ লোমকূপে ধুলাবালি বা ময়লা জমে অথবা ছত্রাক এর আক্রমণের কারণে খুশকি হয়ে থাকে। নিম্নে খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সে কারণগুলোর মধ্যে যে কারণগুলো সচরাচর আমরা নিজেরাই করে থাকি সেগুলো বর্ণনা করা হলো।
নিয়মিত চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার না করাঃ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমাদের প্রতিনিয়ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। নিয়মিত চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কার না করা খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেগুলোর মধ্যে একটি। বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ধুলাবালি এবং ডাস্ট থাকে। সেগুলো মাথায় চুলের সাথে জমে খুশকি তৈরি করে। যে সকল মানুষ ধুলাবালি প্রবণ এলাকায় বসবাস করেন বা কাজের জন্য যান তাদের ক্ষেত্রে খুশি হওয়ার প্রবণতা বেশি।
খুশকি সংক্রামকঃসঠিক এবং পর্যাপ্ত পরিচর্যার পরেও অনেক সময় খুশকি লক্ষ্য করা যায়। আমরা অনেকেই জানি যে পরিবারের কোনো সদস্যের মাথায় খুশকি থাকলে তার ব্যবহারে জিনিসপত্র অন্য কেউ ব্যবহার করলে তারও খুশকি হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ সকল জিনিসপত্র পৃথক পৃথকভাবে ব্যবহার করা উত্তম। একই জিনিস সকলে ব্যবহার করার ফলে খুশকির সংক্রমণ ঘটে। খুশকির সংক্রমণ খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি তাদের মধ্যে একটি।
সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার না করাঃ
অনেক সময় আমরা সঠিক সময়ে সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করি না। সঠিক সময়ে সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার না করা খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেগুলোর মধ্যে আরেকটি সাধারণ কারণ। যে শ্যাম্পু গুলোতে জিংক পাইরোথিন, স্যালিস্যলিক এসিড, সেলেনিয়াম সালফাইড রয়েছে সেগুলো সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করার ফলে খুশকি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সালফারযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের ফলে মাথায় খুশকি দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক ত্বকঃত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। বিশেষত শীতকালে আবহাওয়া আদ্রতা কমে যাওয়ার কারণে দেহের ত্বক এবং মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। যার ফলে শীতকালে খুশকির উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও শীতকালের বাইরে ঠান্ডা বাতাস এবং ঘরের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণেও খুশকি হতে পারে।
যথেষ্ট পরিমাণে চুল না আঁচড়ানোঃযথেষ্ট পরিমাণে চুল না আঁচড়ানো খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি তাদের মধ্যে সাধারণ কারণ। মাথার চুল কম আড়ানোর ফলে মাথার মৃত কোষ গুলো ঝরে পড়ার প্রবণতা কমে যায়। যার ফলে খুশকি সৃষ্টি হয়।
মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যাবহারঃ
যারা মাথায় খুব বেশি তেল ব্যবহার করেন তাদের খুশকি সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করলে তেল গুলো চুলের গোড়ায় উস্তুপ আকারে জমা হয়ে থাকে। এবং সেখানে ছত্রাক দ্বারা আক্রমণ ঘটে এবং খুশকির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবঃশরীরকে সবদিক দিয়ে সুস্থ রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাব খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সে কারণ গুলোর মধ্যে একটি। আমরা প্রতিনিয়ত যে খাবারগুলো খায় সে খাবারের পর্যাপ্ত ভিটামিন বি ও জিংক না থাকার কারণে খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও অত্যধিক চর্বি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার ফলেও খুশকি হতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপঃঅতিরিক্ত মানসিক চাপও খুশকি বেশি হওয়ার কারণ কি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ। যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন অথবা মানসিক চাপ রয়েছে এরকম কোন সেক্টরে কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে খুশি হওয়ার প্রবণতা বেশি রয়েছে।
ওষুধঃচর্ম রোগের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন বা মলম ব্যবহার করতে হয়। এ সকল ওষুধ সেবন এবং মলম ব্যবহারের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে খুশকি দেখা দিতে পারে।
প্রিয় পাঠক এই পোস্টে আমরা খুশকি বেশি হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান কিছু কারণ এবং অন্যান্য সাধারন কারণগুলো সম্পর্কে জানলাম। তাই খুশকি থেকে বাঁচতে হলে এই সকল কারণগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিনিয়ত চুল পরিষ্কার করুন ও চুলের যত্ন নিন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url