গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায়

আপনি কি গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় এগুলো খুঁজছেন। তাহলে আজকের এই পোস্ট থেকে গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় গুলো জেনে নিন। গ্রীষ্মের প্রখর দাবদাহে সৃষ্ট ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে নিজেকে এবং অন্যদেরকে রক্ষা করুন।

গরম বাড়ার সাথে সাথে ঘামাচির যন্ত্রনাও বাড়তে থাকে। তাই এই ঘামাচি থেকে আমাদের সকলেরই মুক্তি প্রয়োজন।

গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমের জন্য শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম ঝরে। অতিরিক্ত ঘাম ঝরার কারণে অনেকেরই ঘামাচির সমস্যা দেখা দেয়। ঘামাচি হওয়ার ফলে শরীরে প্রচন্ড চুলকানি দেখা দেয়। কোন ধরনের কাপড় পড়ে স্বস্তিতে থাকা যায় না। গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় গুলো জানা থাকলে এবং নিয়ম মেনে চললে সহজেই ঘামাচি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

ঘামাচির ইংরেজি হল হিট র‍্যাশ (Heat rash)। ঘাম থেকে ঘামাচি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ঘামাচি একপ্রকার চর্ম রোগ। প্রচন্ড গরমের কারণে আমাদের ত্বকে লাল বর্ণের যে ফুসকুড়ির মত দেখা যায় সেগুলো সাধারণত ঘামাচি নামে পরিচিত। ঘামাচির ফলে শরীরে জ্বালাপোড়া এবং প্রচন্ড চুলকানি হতে পারে।

যখন কোন কারনে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে না তখন ঘাম শরীরের ত্বকে গরমের প্রভাবে ঘামাচি তৈরি করে। প্রতিটি মানুষের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থের সাথে স্টেফ এপিডারমাইডিস নামে এক ধরনের জীবাণু থাকে।

যেহেতু গরমের সময় অতিরিক্ত ঘাম ঝরে এবং এই ঘামের সাথে ধুলোবালি বেশি পরিমাণে জমার সুযোগ পায়। ধুলোবালি জমার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হতে পারে না এবং স্টেফ এপিডারমাইডিস জীবানুর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ঘামাচি উৎপন্ন হয়।

ঘামাচি সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

(১) মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা (Miliaria Cristalina)

এ ধরনের ঘামাচি হওয়া স্বাভাবিক। এই ঘামাচির ক্ষেত্রে তেমন উপসর্গ নাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত ত্বকের এপিডার্মিস থেকে এই ঘামাচি উৎপন্ন হয়।

(২) মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা (Miliaria Profunda)

এই ঘামাচির সাথে  মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা ঘামাচির অনেক মিল রয়েছে।

(৩) মিলিয়ারিয়া রুব্রা (Miliaria Rubra)

আমরা যে ঘামাচির জন্য তীব্র যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি ভোগ করি তা হল  মিলিয়ারিয়া রুব্রা (Miliaria Rubra)। ত্বকে অতিরিক্ত ধুলোবালি বা ডাস্ট জমে যাওয়ার ফলে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে যে ঘামাচি হয় তাকে  মিলিয়ারিয়া রুব্রা (Miliaria Rubra) বলা হয়। এই ঘামাচির ফলে ত্বকে লাল বর্ণের ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং এই ফুসকুড়ির মধ্যে পানি জমা থাকে। এই ঘামাচি হলে তর জ্বালাপোড়া এবং প্রচন্ড চুলকানি হয়। এই ঘামাচি ত্বকের গভীর অর্থাৎ ডারমিস থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে।

ঘামাচি প্রতিরোধ করার জন্য কয়েকটি উপায় নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

(১) ঠান্ডা জায়গা বা ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। ঘরে অতিরিক্ত আলোর প্রবেশ বন্ধ করুন।

(২) দিনের বেলায় পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রয়োজনের ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ওরাল স্যালাইন বা অন্যান্য জুস পান করুন। এবং সফট ড্রিঙ্কস পান করা থেকে বিরত থাকুন।

(৩) গ্রীষ্মকালে শুতি কাপড়ের পোশাক পরার চেষ্টা করুন।

(৪) বাইরে থেকে বাসায় ফিরে একটু বিশ্রাম করে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন।

(৫) কড়া গন্ধযুক্ত বা কেমিকেল যুক্ত পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

কয়েক টুকরা বরফের টুকরা নিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত স্থানগুলোতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভালোভাবে ঘষুণ। ঘামাচির তীব্রতা কমে যাবে।

বেকিং সোডার মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে। পরিমাণ মতো বেকিং সোডা পানির সাথে ভালো ভেবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট শরীরের যে সকল স্থানে ঘামাচি রয়েছে সেখানে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। কয়েক মিনিট অপেক্ষা করার পর শুকনো কাপড় বা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে এক টেবিল চামচ গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এবং সে পেস্ট ঘামাচির ওপর ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।

পেস্ট গুলো শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। ঘামাচির যন্ত্রণা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঘামাচির পরিমাণও কমে যাবে।

লাউ একটি ঠান্ডা সবজি। লাউ ভালোভাবে আগুনে ঝলসে নিয়ে সে লাউ এর জুস বানিয়ে পান করলে ঘামাচির ক্ষেত্রে উপকার পাবেন।

গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় গুলোর মধ্যে অ্যালোভেরার ব্যবহার অন্যতম এবং কার্যকরী। ঘামাচি দূর করতে এলোভেরা খুব ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা জেলকে ভালোভাবে ফেটে পেস্ট করে ঘামাচির উপরে লাগিয়ে ভালো হবে মালিশ করুন। অ্যালোভেরা জেলের সাথে প্রয়োজনে হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ঘামাচির যন্ত্রণা কমবে এবং ঘামাচি ও দূর হবে।

নিম পাতার ব্যবহার করে আপনি গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তিপেতে পারেন। পরিমাণ মতো নিমপাতা পানিতে ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন। সে পানি ঠান্ডা করে শরীরের সমস্ত জায়গায় মালিশ করুন। অথবা নিম পাতা রসের সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে ঘামাচির উপরে লাগালেও উপকার পাবেন।

অতিরিক্ত ঘামাচি হলে ক্যালামিলন লোশন (ক্যালামিলন) ঝাঁকিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত স্থানগুলোতে ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘন্টা মত অপেক্ষার পর ধুয়ে ফেলুন। ঘামাচি তীব্রতা এবং যন্ত্রনা অনেকখানি কমে যাবে। এভাবে অনধিক তিন থেকে চার দিন নিয়মিত ব্যবহার করুন।

গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হিসেবে টেলকম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। টেলকম পাউডার ব্যবহার করলে শরীর অতিরিক্ত ঘাম থেকে রক্ষা পায়। ফলে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এক্ষেত্রে সুগন্ধিহীন পাউডার ব্যবহার করা উত্তম হতে পারে।

ঘামাচি তীব্রতা এবং চুলকানি কমানোর জন্য ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে পারে। পরিষ্কার সুতির কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে ঘামাচির স্থানে ঘষতে পারেন। এভাবে দিনে ২-৩ বার করলে ঘামাচির তীব্রতা কমবে।

গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে ছোলার ডাল ব্যবহার করতে পারেন।

পরিমাণমতো ছোলা পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে ছোলা গুলো ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে ঘামাচির স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

ঘামাচির জন্য চুলকানি কম হওয়ার সাথে সাথে ঘামাচির পরিমাণও কমবে।

চন্দন বাটা বা চন্দন গুঁড়োর সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ঘামাচির স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

রূপচর্চার জন্য আলুর ব্যবহারের পাশাপাশি ঘামাচির ক্ষেত্রেও আলু বেশ কার্যকর। আলু পাতলা করে কেটে নিয়ে ঘামাচির উপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন। অথবা আলুর রস করে সেই রসও লাগাতে পারেন।

তরমুজ শুধু খেতেই ভালো নয় ঘামাচির ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে। পরিমাণ মতো তরমুজের লাল অংশ ভালোভাবে ফেটে ঘামাচির উপরে লাগালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

ঘামাচির ক্ষেত্রে শসার ব্যবহার আরামদায়ক। শসার রূপচর্চার কাজেও অনেক ব্যবহৃত হয়। শসা আমাদের শরীরে ডিহাইড্রেশন রোধ করার পাশাপাশি আরো অনেক উপকার করে। শসা পাতলা করে কেটে নিয়ে ঘামাচির স্থানে লাগিয়ে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন। এবং পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলকানি তীব্রতা এবং ঘামাচি উভয়ই কমবে। রূপচর্চার পাশাপাশি আপনার গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হতে পারে শসার ব্যবহার।

গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হিসেবে আপনি আদার রস ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণ মতো আদা পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। আধা ফুটানো পানি ঠান্ডা করে পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে ঘামাচির জায়গাগুলোতে ভালোভাবে ঘষতে হবে।

নিয়মিত সাত দিন এইভাবে ব্যবহার করলে ঘামাচির সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। আদার রস করেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করতে আপনি এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার শরীরে অতিরিক্ত ঘামাচি হলে এই তেল পরিষ্কার কাপড় নিয়ে সারা শরীরে ভালোভাবে মালিশ করুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ঘামাচি দূর হবে। এসেনশিয়াল তেল এর ব্যবহার গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ঘামাচির যন্ত্রণায় সকলেই অদৃষ্ট। গরমকালে ঘামাচির কারণে কেউই স্বস্তিতে দিন যাপন করতে পারে না। অস্বস্তিকর ঘামাচি থেকে মুক্তির প্রয়োজন। আপনারা যদি বাস্তব জীবনে গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায় এগুলো ব্যবহার করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।