বিমানবন্দর নিরাপত্তা নিয়মকানুন - হ্যান্ডব্যাগ ও লাগেজে যা নিষিদ্ধ
ভ্রমণের প্রস্তুতি বলতে আমরা সাধারণত বুঝি ব্যাগ গুছানো, টিকিট প্রিন্ট করা, ফোন চার্জ দেওয়া এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছে যাওয়া। তবে অনেকেই যে বিষয়টি প্রায়ই ভুলে যান, সেটি হলো—নিরাপত্তা চেকিংয়ের সময় কোন জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া যাবে আর কোনটা নয়, সে সম্পর্কে সচেতন থাকা।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট এমন একটি স্থান, যেখানে আপনার ব্যাগের প্রতিটি সামগ্রী স্ক্যান করে খুঁটিয়ে দেখা হয়। সামান্য অসাবধানতাও আপনাকে প্রিয় পারফিউম কিংবা সদ্য কেনা পাওয়ার ব্যাংকটি ফেলে দেওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীনও হতে হতে পারে। তাই ভ্রমণের আগে ভালোভাবে জেনে নিন—কোন কোন বস্তু বহন করা নিষিদ্ধ এবং কোন কোন জিনিস নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
ভ্রমণে বের হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার কাজটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ—কাপড়, কসমেটিকস, দরকারি ডিভাইস, আর সাথে কিছু জরুরি ওষুধ। কিন্তু ব্যাগ গুছানোর সময় যদি একটু অসতর্ক থাকেন, তাহলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চেকিংয়ে পড়তে পারেন বড় ধরনের ঝামেলায়। কারণ কিছু জিনিস আছে, যেগুলো ক্যারি-অন ব্যাগে বা চেকড লাগেজে নেওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। আবার কিছু আইটেম আছে, যেগুলো নেওয়া যায় ঠিকই, তবে মানতে হয় নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন।
অনেকেই মনে করেন, ‘ব্যাগে তো শুধু আমার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, এতে আর সমস্যা কী!’ কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নীতিমালা এতটা সহজ নয়। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে বিমানবন্দরগুলো কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কী কী জিনিসের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে? চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে তরল জাতীয় পণ্য—যেমন পারফিউম, মেকআপ রিমুভার, বডি লোশন, তেল, এমনকি পানি কিংবা জুসও। এগুলোর যেকোনোটি যদি ১০০ মিলিলিটারের বেশি হয়, তাহলে সেগুলো হ্যান্ড ব্যাগে বহন করা যাবে না। এই ধরনের তরল সামগ্রী সঙ্গে নিতে চাইলে সেগুলো রাখতে হবে স্বচ্ছ (ট্রান্সপারেন্ট) জিপ লক ব্যাগে, এবং প্রতিটি কনটেইনারের পরিমাণ হতে হবে সর্বোচ্চ ১০০ মিলিলিটার।
তবে শিশু খাদ্য ও ওষুধের ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। যদি শিশুর জন্য দুধ বা কোনো ওষুধ বহন করা জরুরি হয়, তাহলে উপযুক্ত প্যাকেজিং ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ (যেমন প্রেসক্রিপশন) থাকলে তা হ্যান্ড ব্যাগে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
ধারালো ও বিপজ্জনক জিনিস নয়
অনেক যাত্রী রান্নার প্রয়োজন বা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ছুরি, কাঁচি, ব্লেড কিংবা সুইস আর্মি নাইফ সঙ্গে নিতে চান। তবে এ ধরনের ধারালো বস্তু হ্যান্ড ব্যাগে বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এমনকি চেকড লাগেজেও এসব আইটেম রাখার বিষয়ে রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম, যা সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনের অনুমতির ওপর নির্ভর করে। তাই এমন জিনিসপত্র সঙ্গে না রাখাই সবচেয়ে নিরাপদ, কারণ এগুলোর কারণে আপনি নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে পারেন।
এ ছাড়া আগুন লাগার ঝুঁকিপূর্ণ বস্তু যেমন লাইটার ফুয়েল, আতশবাজি বা অ্যারোসল স্প্রে একেবারেই নিষিদ্ধ। একইভাবে, খেলনা বন্দুক, স্টান গান কিংবা পিপার স্প্রের মতো আইটেমও বিমানে বহন করার অনুমতি নেই, কারণ এগুলো নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
পাওয়ার ব্যাংক এখন শুধু হাতে
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের TSA (Transportation Security Administration) ও FAA (Federal Aviation Administration) ঘোষণা দিয়েছে, লিথিয়াম ব্যাটারিচালিত পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং কেস চেকড লাগেজে বহন করা যাবে না। এর কারণ, মাঝ আকাশে এই ধরনের ব্যাটারি থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা থাকে। তাই এইসব ডিভাইস কেবল ক্যারি-অন ব্যাগেই নেওয়া যাবে। নিরাপত্তা রক্ষার্থে সম্ভব হলে এগুলো আগেই ঘোষণা করে দেওয়া উত্তম।
খেলার সরঞ্জাম ও টুলসেও বিধিনিষেধ
ক্রিকেট ব্যাট, হকি স্টিক, গলফ ক্লাব কিংবা মার্শাল আর্টের সরঞ্জামগুলো হ্যান্ড ব্যাগে নেওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে হাতুড়ি, স্ক্রুড্রাইভার, করাতের মতো যন্ত্রপাতিও নিরাপত্তার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। সুতরাং, এসব জিনিস বহন করলে বিমানবন্দরে তা বাজেয়াপ্ত বা আটকানো হতে পারে।
যেসব জিনিস রাখা যায়
এত নিষেধাজ্ঞার পর প্রশ্ন হয়, তাহলে কী কী জিনিস সঙ্গে নেওয়া যাবে?
- মোবাইল, ল্যাপটপ, চার্জার (নিরাপত্তা চেকিংয়ে আলাদা করে দেখাতে হয়)
- ওষুধ (প্রেসক্রিপশনসহ)
- ১০০ মিলিলিটার বা তার কম তরল, অবশ্যই ট্রান্সপারেন্ট জিপ লক ব্যাগে রাখা
- বই, কাগজপত্র, এবং পোশাক
- হালকা শুকনো খাবার
- শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ বা খাবার
ভ্রমণের আগে করণীয়
ভ্রমণের আগে অবশ্যই আপনার এয়ারলাইনের ওয়েবসাইটে প্যাকিং গাইডলাইনগুলো ভালোভাবে দেখে নিন। চেকড লাগেজ আর হ্যান্ড ব্যাগে কোন জিনিস কোথায় রাখবেন তা আগে থেকেই বুঝে নিয়ে ব্যাগ গোছান। যদি কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে স্পষ্ট করে প্রশ্ন করুন।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ম সকলের জন্যই প্রযোজ্য। একটু সতর্ক থাকলেই আপনি নিজের সময় বাঁচাতে পারবেন এবং পুরো ফ্লাইটের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। তাই ভ্রমণের আগে ব্যাগ গুছানোর সময় ভালোভাবে ভাবুন-- কি নেওয়া যাবে এবং কি নেওয়া যাবে না।

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url