৩ স্টার, ৫ স্টার এবং ৭ স্টার হোটেলের মধ্যে পার্থক্য কী
আমরা ব্যক্তিগত ও পেশাগত কাজে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করে থাকি। আর কয়েক দিনের জন্য অজানা কোনো জায়গায় গেলে থাকার জন্য বেশিরভাগ মানুষ হোটেলকেই বেছে নেন। সাধারণত রেটিং ও রিভিউ দেখে হোটেল ঠিক করা হয়। প্রতিটি হোটেলের নামের পাশে তার কত তারকা বা স্টার রয়েছে, সেটাও উল্লেখ থাকে। অধিকাংশ মানুষ জানেন, স্টার যত বেশি, হোটেলের সুযোগ-সুবিধাও তত উন্নত। পাশাপাশি হোটেলের সার্ভিস ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও সেই স্টার রেটিং থেকে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
তবে প্রশ্ন হলো, এই ‘স্টার’ রেটিং আসলে নির্ধারণ করে কারা? জেনে আপনি চমকে যেতে পারেন—কারণ বিশ্বজুড়ে হোটেলের জন্য কোনো একক নির্ধারক সংস্থা বা কমিটি নেই। প্রতিটি দেশে আলাদা আলাদা সংস্থা মিলেই এই রেটিং নির্ধারণ করে। সাধারণভাবে, হোটেলের ঘরের আকার, পরিচ্ছন্নতা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং পরিষেবার মান ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ড তৈরি করা হয়। পরে সেই মানদণ্ড অনুযায়ী হোটেলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে তার রেটিং ঠিক করা হয়।
বিংশ শতকের শুরুতে হোটেলগুলোর স্টার রেটিং ব্যবস্থার সূচনা ঘটে বলে ধারণা করা হয়। অনেকে মনে করেন, এটি প্রথম চালু হয় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (AA)-এর উদ্যোগে। আবার আরেকটি মত অনুযায়ী, ফোর্বস ট্রাভেল গাইডই সর্বপ্রথম হোটেল রেটিংয়ের জন্য স্টার সিস্টেম প্রবর্তন করে।
বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় হোটেল রেটিং নির্ধারণের দায়িত্বে রয়েছে দুটি প্রধান সংস্থা—আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন (AAA) এবং ফোর্বস ট্রাভেল গাইড। অন্যদিকে, ইউরোপের হোটেলগুলোর রেটিংয়ের দায়িত্ব পালন করে ইউরোপিয়ান হোটেল স্টারস ইউনিয়ন নামের একটি নির্দিষ্ট সংস্থা।
প্রতিটি সংস্থারই রয়েছে নিজেদের নির্ধারিত মানদণ্ড ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। তাই দেখা যায়, নেপালের একটি পাঁচতারকা হোটেল অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়ার কোনো তিনতারকা হোটেলের তুলনায় কম বিলাসবহুল বা কম মানসম্পন্ন হয়ে থাকে।
তবে সামগ্রিকভাবে এক তারকা থেকে পাঁচ তারকা পর্যন্ত হোটেলগুলো কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। চলুন, এখন সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা নেওয়া যাক।
ওয়ান স্টার বা একতারকা হোটেল
ওয়ান স্টার হোটেল সাধারণত খুবই কম খরচে থাকা যায়, তাই বাজেট-সচেতন ভ্রমণকারীদের জন্য এটি সহজলভ্য। এই ধরনের হোটেলে আপনি একটি পরিষ্কার ঘর, ঘুমানোর উপযোগী একটি বিছানা, টয়লেট সুবিধা এবং গরম ও ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা পাবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এসব হোটেলের কক্ষগুলো বেশ ছোট এবং সীমিত জায়গার মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে রাখা হয়।
টু স্টার বা দুইতারকা হোটেল
টু স্টার হোটেলগুলোতে ওয়ান স্টার হোটেলের তুলনায় কিছুটা উন্নত সুবিধা পাওয়া যায়। এ ধরনের হোটেলে কক্ষের আকার একটু বড় হতে পারে এবং রাত্রিযাপনের খরচ প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে থাকে। সাধারণত এখানে আপনি একটি আরামদায়ক বিছানা, পরিষ্কার বাথরুম, টেবিল-চেয়ারসহ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। কিছু কিছু হোটেলে টেলিভিশন ও টেলিফোন সুবিধাও থাকতে পারে, যদিও সেগুলো অনেক সময় পুরনো ও অচল থাকার সম্ভাবনা থাকে।
থ্রি স্টার বা তিনতারকা হোটেল
তিনতারকা হোটেলগুলোতে তুলনামূলকভাবে বড় ও বেশি আরামদায়ক কক্ষ পাওয়া যায়। এসব হোটেলে সাধারণত এসি, ওয়াই-ফাই, টেলিভিশনসহ আধুনিক বেশ কিছু সুবিধা থাকে। পাশাপাশি গাড়ি রাখার জন্য পার্কিং ব্যবস্থাও থাকে। এখানে রাতযাপনের জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। অনেক তিনতারকা হোটেলে এখন ব্যুফে স্টাইলে সকালের নাশতার ব্যবস্থাও দেখা যায়।
ফোর স্টার বা চারতারকা হোটেল
চারতারকা হোটেলগুলোতে অতিথিদের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশি বিলাসবহুল সুবিধা রাখা হয়। এসব হোটেলে সাধারণত স্যুইট রুম, বাথটাব, ওয়াই-ফাই, মিনি বার, ফ্রিজের মতো আধুনিক সুবিধা থাকে। পাশাপাশি টিভি, সুইমিং পুল, সাইড বার ও কফিশপও পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের হোটেলে থাকার খরচ কিছুটা বেশি হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক চারতারকা মানের হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে।
ফাইভ স্টার বা পাঁচতারকা হোটেল
পাঁচতারা হোটেলে অতিথিদের আতিথেয়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। অতিথিদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে জিম, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবা সহ নানা বিলাসবহুল সুবিধা রাখা হয়। ২৪ ঘণ্টা রুম সার্ভিসও এখানে পাওয়া যায়। এসব হোটেলের কক্ষগুলো সাধারণত বেশ প্রশস্ত হয়ে থাকে।
সেভেন স্টার বা সাততারকা হোটেল
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু হোটেল নিজেদের ‘সেভেন স্টার’ বা সাততারকা হোটেল হিসেবে দাবি করলেও, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য এখনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো নির্ধারিত মানদণ্ড নেই। এ হোটেলগুলোতে কক্ষভাড়া ও খাবারের মূল্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
তথ্যসূত্র: হোটেল কন্ট্রাক্ট বেডস, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url