নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা - মধুর উপকারিতা

মধু মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামত। স্বাস্থ্যরক্ষা ও রোগ নিরাময়ে মধুর গুরুত্ব অপরিসীম। মধু বলকারক এবং উত্তম উপাদেয় খাদ্য নির্যাস। কোন কোন চিকিৎসাশাস্ত্রে মধুকে মহৌষধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা নানাবিধ যা এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।

নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা - মধুর উপকারিতা

মধু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে খুবই সুস্বাদু একটি পানীয় হিসেবে পরিচিত। পুষ্টিকর এবং শক্তিবর্ধক পানীয় হিসেবে মধু প্রায় সব দেশেরই প্রিয় পানীয়। এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী এবং নিয়মিত মধু খেলে অসংখ্য রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেই-

ভুমিকা

পুষ্টিগুণ এবং উপদেয়তা বিবেচনা করে আমাদের খাবারের তালিকায় মধুকে প্রথম স্থানে রাখা উচিত। মধুতে প্রায় ৪৫ টি খাদ্য উপাদান রয়েছে। প্রধান উপাদান গুলো হল গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, মন্টোজ, অ্যামাইনো এসিড, খনিজ লবণ ও অ্যালকাইন। মধুর পুষ্টিগুণ এবং মিষ্টি স্বাদ সকলের কাছে এটিকে প্রিয় করে তুলেছে।

মধুর উপাদান সমূহ

মধুতে রয়েছে পানি, ফাইটোনসাইড্‌, এন্টিবায়োটিক, এসিটাইল কোলিন, হরমোনস, প্রোটিন, কতিপয় ভিটামিন, অক্সালিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, জিংক, টিন, লেড, কপার, ক্রোমিয়াম, বোরন, অ্যালুমিনিয়াম, ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। উপস্থিত ভিটামিন গুলোর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সহ আরো কয়েকটি ভিটামিন।

মধুর উপকারিতা

নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা বা নিয়মিত মধু পান করলে যে সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নরূপ-

  • নিয়মিত মধু পান হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। রক্তনালী প্রসারণ এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে হৃদপেশীর কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখে এবং হ্রদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • দাঁতকে মজবুত ও শক্তিশালী করে। দাঁতের মাড়ির শক্ত করে এবং দাঁতকে পরিষ্কার রাখে।
  • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুলাংসে বৃদ্ধি করে।
  • মধু আমাদের শরীরের তাপ উৎপাদনের অন্যতম উৎস। তাই নিয়মিত মধু পানে শরীরের তাপ বৃদ্ধি করে শরীরের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • আমাদের মস্তিষ্কের স্মরণ শক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
  • মধু পান রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করে।
  • নিয়মিত মধু পান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং বার্ধক্য দেরিতে আনে।
  • যাদের আলসারের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত মধু পান করলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগে অনেক উপকার পাবেন।
  • মধু পাকস্থলীর ক্রিয়া বৃদ্ধি করে দ্রুত খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং অন্ত্রের রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
  • শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
  • শিশুদের নিয়মিত মধু পান করার অভ্যাস গড়ে তুললে তারা ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ও জ্বর থেকে মুক্ত থাকে।
  • ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগ যেমন গলা ব্যথা,কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • শরীরের বিভিন্ন ব্যথা যেমন বাতের ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি দূর করে।
  • মধুতে অতিরিক্ত ফ্যাট না থাকায় শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • নিয়মিত মধু পান মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং জিহবার জড়তা কাটায়।
  • মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ক্ষুধা, হজম শক্তি ও রুচি বৃদ্ধি করে।
  • শিশুদের নিয়মিত মধুপান করালে দৈহিক গড়ন, মেধার বিকাশ ও ওজন বৃদ্ধি পায়।

মধু খাওয়ার উপযুক্ত সময়

প্রকৃতপক্ষে মধু খাওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। আপনি সারাদিনের যেকোনো সময় মধু পান করতে পারেন। শরীরকে যদি ক্লান্ত মনে হয়, মধু খেলে তৎক্ষণাৎ প্রশান্তি পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন পুষ্টিবিদ সকালে খালি পেটে মধু পান করাটাকে উপযুক্ত সময় বলে বিবেচনা করে থাকেন। এই সময় মধুপান করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

মধু খাওয়ার নিয়ম

মধু খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম এর ব্যাপারে পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দেননি। তবে তারা নিয়মিত মধুপানকে উৎসাহিত করে থাকেন। শরীরের অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্নজনের মধু পানের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে নিয়মিত মধু খাওয়ার উপকারিতা সর্বোত্তমভাবে পেতে হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানির সাথে ১-২ চামচ মধু খেতে পারেন।

শেষ কথা

ইউনানী এবং হারবাল চিকিৎসকদের মতে মধু মহৌষধের মত কাজ করে। নিয়মিত মধু পান করলে কমবেশি প্রায় সকল রোগের ক্ষেত্রেই উপকার পাওয়া যায়। তাই শরীরকে সুস্থ, সবল ও সতেজ রাখতে নিয়মিত মধু খান।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url