আর্টিকেল লেখার নিয়ম - পার্ট ০১

আমরা আমাদের ওয়েবসাইট, ব্লগ বা পেজের জন্য আর্টিকেল লিখে থাকি। আর্টিকেল লেখার সময়ই আমাদের একেক জনের লেখার ধরন বা কৌশল একেক রকম হয়। একটা নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করে সেই বিষয়ের উপরে আর্টিকেল লেখা হয়। তবে আর্টিকেল লেখার সময় বেশকিছু আর্টিকেল লেখার নিয়ম এবং কিছু ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিখলে ভালো হয়।

আর্টিকেল লেখার নিয়ম

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আর্টিকেল লেখা নিয়ম বা কিছু কৌশল সম্পর্কে আপনাদেরকে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। যে কৌশল গুলো অবলম্বন করলে আর্টিকেল লেখাটা অনেকটা সহজ এবং সুন্দর হয়। চলুন তাহলে আর্টিকেল লেখা নিয়ম গুলো জেনে নেই।

ভূমিকা

আর্টিকেল লিখে আয় করার জন্য আমাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ। আর পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে হলে, আর্টিকেলটি অবশ্যই পাঠকের জন্য উপকারী হতে হবে। তাই আর্টিকেল লেখার নিয়ম বা কিছু কৌশল অবলম্বন করে আর্টিকেল লিখলে আর্টিকেলটিকে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে উপস্থাপন করে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।

স্ক্রিনশটস টেকনিক

তথ্যপ্রযুক্তিগত কোন আর্টিকেল বা পোস্টে আমাদের অনেক সময় পাঠকদের কিছু নির্দেশনা প্রদান করতে হয়। এই নির্দেশনাগুলো ভাষায় লিখে পাঠকদের বোঝানো অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। নির্দেশনাগুলো পাঠকের কাছে বোধগম্য করার জন্য আমাদের কিছু স্ক্রিনশট নেওয়া প্রয়োজন হয় এবং এই স্ক্রিনশটগুলো পোষ্টের মধ্যে শেয়ার করতে হয়। তবে যেন তেন হবে স্ক্রিনশট নিয়ে পোষ্টের মধ্যে শেয়ার করলে তা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে না বরং পোষ্টের সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাই স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার। এই লক্ষণীয় বিষয়গুলোকেই আমরা বলি স্ক্রিনশট টেকনিক। টেকনিকগুলো নিম্নরূপ -

  • স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে অপ্রয়োজনীয় কোন অংশ যেন স্ক্রিনশট এর মধ্যে চলে না আসে।
  • আবার গৃহীত স্ক্রিনশটটি শুধুমাত্র মূল অংশ বরাবর ছোট হয়ে গেলেও সেটা আকর্ষণীয় হবে না। তাই স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় মূল অংশের সাথে প্রাসঙ্গিক অংশটুকুও সংযুক্ত রেখে স্ক্রিনশট নিলে ভালো হয়।
  • স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে স্ক্রিনশটটি মোবাইলের নাকি কম্পিউটারের সেটা যেন বোঝা যায়।
  • মোবাইল স্ক্রিনশট নেওয়ার সময় মোবাইলের যে নিজস্ব স্ক্রিনশট টুলস আছে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি স্মার্ট মোবাইলেই তার নিজস্ব একটা স্ক্রিনশট নেওয়ার টুলস রয়েছে। তবে এক এক মোবাইলের স্ক্রিনশট নেয়ার পদ্ধতি একেক রকম। যেমন কোন কোন মোবাইলে আছে তিনটা আঙ্গুল একসাথে ডিসপ্লের উপর দিয়ে স্লাইড করলেই স্ক্রিনশট নেয়া যায়। আবার কোন মোবাইলে আছে ভলিউম অফ এবং ডাউন বাটন একসঙ্গে চেপে ধরতে হয়। সুতরাং মোবাইলের টুলস অনুযায়ী স্ক্রিনশট গ্রহণ করুন।
  • মোবাইলের গৃহীত স্ক্রিনশটটি যদি ক্রপ করার প্রয়োজন হয় তাহলে ইমেজের এডিট অপশনে গিয়ে ইচ্ছামত প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রপ করে নিতে পারবেন।
  • ল্যাপটপ বা ডেক্সটপে স্ক্রিনশট নিতে হলে স্নিপিং টুল ব্যবহার করতে পারেন। স্ক্রিনশট যদি ক্রপ করার প্রয়োজন হয় তাহলে কম্পিউটারের ফটো ভিউয়ার অথবা Adobe Photoshop সফটওয়্যার ব্যবহার করে ক্রপ করে নিতে পারেন।
  • আপনার গৃহীত স্ক্রিনশটটি প্রকাশ করার পূর্বে স্ক্রিনশটে আপনার ওয়েবসাইটের নাম সম্বলিত জলছাপ ব্যবহার করুন, যাতে ছবিটি কেউ কপি করে ক্রেডিট ছাড়া অন্য কোথাও ব্যবহার করতে না পারে।
  • আপনার গৃহীত স্ক্রিনশটটি কোন অংশ আপনি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছেন সেটা ফটো এডিটরের মাধ্যমে তীর চিহ্ন অথবা গোল দাগ দ্বারা চিহ্নিত করে দিন। তাতে পাঠক খুব সহজেই তার কাঙ্ক্ষিত অংশটি বা জায়গাটি খুঁজে পাবে।

গ্রামাটিক্যাল এরর চেকার

আমরা আর্টিকেল লেখার সময় যদি গ্রামাটিকাল বা বানানগত কোন ভুল করে থাকি, তাহলে তা কিভাবে সংশোধন করব, আসুন সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। আমাদের লেখালেখি করার সময় বানানের ভুল হয়ে যেতে পারে। সেই ভুলগুলো সংশোধনের জন্য আমরা কয়েকটি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি। আমাদের ভুলগুলো যদি ইংরেজি লেখার ক্ষেত্রে হয় তাহলে সরাসরি ব্রাউজার থেকেই Spell চেক করে সেখান থেকে সাজেশন অনুযায়ী আমরা সঠিক বানানটি সিলেক্ট করে নিতে পারি। 

বাংলা বানানের ক্ষেত্রে আমরা অভ্র Spell Checker ব্যবহার করে বানানের ভুলগুলো চিহ্নিত করে সাজেশন অনুযায়ী সঠিক বানান ব্যবহার করতে পারি। অভ্র Spell Checker ব্যবহার করার সময় Spell Check অপশন এ ক্লিক করতে পারি অথবা কিবোর্ডের F7 বাটন ক্লিক করেও বানান সংশোধন করা যায়।

অথবা বাংলা বানান এর ব্যবহারের যে সঠিক নিয়ম গুলো রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করেও সঠিক বানান ব্যবহার করে আর্টিকেল লেখা যায়।

কপিরাইটিং বিশ্লেষণ

আর্টিকেল লেখার সময় কপিরাইটিং বিষয়টি কি সেই বিষয়ে আমাদের একটা ধারণা থাকা দরকার। আমরা কপিরাইটিং শব্দটি শুনলেই দুটি শব্দ আমাদের মাথায় চলে আসে কপিরাইট বা কপিপেস্ট। কপিরাইটিং আসলে এই দুইটার কোনটাই নয়। সংক্ষিপ্ত কথাই বলতে গেলে কপিরাইটিং হল এমন একটা লেখা বা রাইটিং যা কোন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এবং দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আস্থা অর্জন করে একজন গ্রাহককে সেই সেবা বা পণ্যটি নিতে বাধ্য করা। অর্থাৎ কোন পণ্য বা সেবা প্রস্তুত করার পর এটা গ্রাহকের মধ্যে চাহিদা তৈরি করে সরবরাহ করতে পারাটাই একজন কপিরাইটারের একজন সফলতা।

কপিরাইটিং এর সময় তিনটি বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া দরকার। 

  • Attention: Attention হলো কোন লেখা বা কোন ছবি প্রকাশ করার মাধ্যমে কোন পাঠক বা গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
  • Promise: Promise হলো আপনি একজন গ্রাহককে কি কি সেবা, সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবেন, সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আস্থা অর্জন করা যাতে গ্রাহক আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে পণ্যটি নিতে আগ্রহী হয়।
  • Call to Action: Call to Action কপিরাইটিং এর সর্বশেষ ধাপ। সর্বশেষ ধাপ অনুযায়ী গ্রাহকদের দ্বারা পণ্যটি নেওয়াটাই হল Call to Action এবং গ্রাহক যদি পণ্যটি নেয় সেক্ষেত্রে কপিরাইটারের সফলতা।

Plagiarism কি? কেন করবেন না

Plagiarism হল অন্য কারো লেখা বা কনটেন্ট কপি করে আসল রাইটারের অনুমতি ছাড়া বা উপযুক্ত ক্রেডিট উল্লেখ ছাড়া নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া। সহজ ভাষায় বলতে গেলে অন্য কারো কনটেন্ট নিজের বলে চালিয়ে দেওয়াটাই Plagiarism. আরো সহজ কথায় অন্য কোন ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সরাসরি কপি করে নিজের ওয়েবসাইট বা প্লাটফর্মে আসল রাইটারের অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করাটাই Plagiarism.

এখন কথা হচ্ছে Plagiarism কেন করবেন না। Plagiarism কি সেইটার আলোচনায় নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে এটি একটি আইনগতভাবে অবৈধ এবং নিষিদ্ধ কাজ। তাই আপনি যদি Plagiarism করেন তাহলে কপিরাইট আইন অনুযায়ী আপনি দোষী বলে বিবেচিত হবেন। পাশাপাশি আপনার বিরুদ্ধে যদি কেউ কপিরাইট আইন অনুযায়ী অ্যাকশন এ যায়, সেক্ষেত্রে গুগল আপনার ওয়েবসাইটকে ব্লক করে দিতে পারে বা ব্যান্ড করে দিতে পারে। তাই Plagiarism করা উচিত নয়।

এখন আসুন আমরা একটু জেনে নেই আপনার কোন কনটেন্ট বা লেখা কপি হয়েছে কিনা বা কেউ Plagiarism করেছে কিনা সেটা কিভাবে বুঝতে পারবেন। এটা বোঝার জন্য কয়েকটি পদ্ধতি আছে প্রথমটা হলো Plagiarism Checker.  আপনি গুগলে সার্চ দিলে অনেকগুলো Plagiarism Cheker এর ওয়েবসাইট পাবেন। যে ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি ফ্রি তে কন্টেন আপলোড করে চেক করতে পারবেন আপনার আর্টিকেল বা আপনার পোস্টটি কেউ কপি করে প্রকাশ করেছে কিনা।

www.copyscape.com ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি আপনার পোস্ট এর লেখা দিয়ে চেক করতে পারবেন যে কেউ আপনার লেখাটি কপি করে প্রকাশ করেছে কিনা। এটা সম্পূর্ণ ফ্রিতে করতে পারবেন। এছাড়াও আরো অনেক Plagiarism Checker ওয়েবসাইট রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে ফ্রিতে করা যায় আবার প্রিমিয়াম ভার্সন অর্থাৎ টাকা দিয়েও Plagiarism Checker ব্যবহার করতে পারবেন। ফ্রিতে যেই চেকার টা পাওয়া যায় সেটা সব সময় ভালো কাজ করে না। আপনি চাইলে প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করতে পারে।

এখন জেনে নেই আপনি কিভাবে গুগল Plagiarism Check করবেন। আপনার যে কোন পোস্টের একটা অংশ কপি করে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে আপনি যদি সার্চ করেন তাহলে আপনার ওই লেখাটি হুবহু কোথাও কোন ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়ে থাকলে গুগল আপনাকে ইনডিকেট করে দিবে কোন ওয়েবসাইটে এটা প্রকাশিত হয়েছে। আপনি তার বিরুদ্ধে কপিরাইট স্ট্রাইক করতে পারবেন।

আর্টিকেল স্পিনিং ও স্ক্র্যাপিং বিশ্লেষণ

আর্টিকেল স্পিনিং হলো কোন একটা আর্টিকেলকে শব্দগতভাবে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ কোন আর্টিকেলের কে পরিবর্তনের জন্য তার সমার্থক শব্দ ব্যবহার করা। আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে বলা যায় আর্টিকেলে অর্থ এক রেখে শব্দ পরিবর্তন করা হল আর্টিকেল স্পিনিং। বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল স্পিনিং সফটওয়্যার পাওয়া যায় যেগুলোর মাধ্যমে শাব্দিক পরিবর্তন করে করা যায়।

আবার অন্যদিকে স্ক্র্যাপিং বিশ্লেষণ হলো বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে যে কোন একটা কিওয়ার্ড দিয়ে একটি আর্টিকেল লেখা। এ সকল সফটওয়্যারে আপনি যেকোনো একটি কিওয়ার্ড প্রদান করলেই সেই কিওয়ার্ডের ওপরেই এই সফটওয়্যার গুলো একটা আর্টিকেল লিখে আপনাকে সরবরাহ করবে।

এখন কথা হচ্ছে আমরা আর্টিকেল লেখার ক্ষেত্রে আর্টিকেল স্পিনিং ও স্ক্র্যাপিং করব কিনা। একদম পরিষ্কারভাবে এটাকে বলা যায় আমরা কখনোই আর্টিকেল স্পিনিং ও স্ক্র্যাপিং করব না। অনেকেই হয়তো স্পিনিং এবং স্ক্র্যাপিং করে আর্টিকেল লিখে থাকে। কিন্তু একজন ভালো রাইটার হতে গেলে এই দুইটার কোনটাই করা উচিত নয়। কেননা আর্টিকেল স্পিনিং ও স্ক্র্যাপিং করেন তাহলে গুগল আপনার ওয়েবসাইটের র‍্যাংক ডাউন করে দিতে পারে। সুতরাং বুঝতে পারছেন নিজস্ব ওয়েব সাইটের র‍্যাংকিং এর জন্য এ দুটি পদ্ধতি পরিত্যাগ করা উচিত।

শেষ কথা

আজকের আলোচনায় আমরা আর্টিকেল লেখার নিয়ম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেলাম। এই পোষ্টের আরো একটি পার্ট খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে, যেখানে আরো কিছু নিয়ম কানুন বা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। পরবর্তী পার্ট থেকে আরো কিছু আর্টিকেল লেখার নিয়ম জেনে নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url