রক্তদানের উপকারিতা - নিয়মিত রক্তদান করলে কি কি উপকার হয়

জীবন বাচাতে রক্তদান একটি মহৎ কাজ। নিজের রক্ত অন্য কারো জীবন বাঁচাতে দান করাকে আমরা বলে থাকি রক্তদান। রক্তদানের জন্য দাতার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হওয়া প্রয়োজন। কোন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষ যদি প্রতি তিন মাস অন্তর রক্তদান করেন তাহলে তার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না বরং স্বাস্থ্যের দিক থেকে অনেকগুলো উপকার পাওয়া পাবেন।
 
রক্তদানের উপকারিতা

রক্তদানের উপকারিতা অনেক। আমরা সাধারণত আমাদের রক্তদান বিষয়ে অজ্ঞতা এবং ভীতির কারণে অনেক সময় রক্তদান করতে দীধান্বিত হই। কিন্তু রক্তদানের উপকারিতা সম্বন্ধে আমরা কখনো জানার চেষ্টা করি না। তাই আজকে আমার প্রচেষ্টা থাকবে রক্তদানের উপকারিতা সম্বন্ধে আপনাকে কিছুটা ধারণা দেওয়ার। 

ভূমিকা

রক্তদানকারী সাধারণত দুই ধরনের উপকার লাভ করে থাকেন। একদিকে যেমন শারীরিক উপকার হয় তেমনি মানসিক বা আত্ত্বিক উপকারও হয়ে থাকে। রক্তদান করলে শরীরে কোন সমস্যা হয় না। একজন সুস্থ মানুষের দেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে থেকে সাধারণত ২৫০-৪০০ মিলিমিটার রক্ত নেয়া হয় যা শরীরের মোট রক্তের ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তদানের পর রক্তের যে মূল উপাদান পানি তা ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পূরণ হয়ে যায়।

রক্তদানের উপকারিতা

একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ মানুষ বছরে তিনবার রক্তদান করতে পারেন। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাহলে, আসুন জেনে নেই নিয়মিত রক্তদান করলে কি কি উপকার পাওয়া যায়-

  • প্রতিবার রক্তদানের পর একজন রক্তদাতা অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি হয় এবং ঘাটতি পূরণ হয়।
  • মানুষের শরীরে উপস্থিত লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল ১২০ দিন। অর্থাৎ আপনি রক্তদান যদি নাও করেন তবুও ১২০ দিন পর এই লোহিত রক্তকণিকাগুলো রক্তের অন্যান্য উপাদানের সাথে মিশে যায় এবং নতুন লোহিত কণিকা উৎপন্ন হয়। তাই নিয়মিত রক্তদান করলে লোহিত কণিকাগুলো প্রাণবন্ত হয় এবং রক্তে লোহিত কনিকা উৎপাদনের হার বৃদ্ধি পায়।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
  • রক্তদান রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • রক্তদান করলে যে ক্যালোরি খরচ হয় তা শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।
  • নিয়মিত রক্তদান করলে রক্তের কিছু পরীক্ষা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন- এইচআইভি, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস।
  • একজনের রক্তদানে আরেক জনের জীবন হচ্ছে বাঁচে।
  • রক্তদান করলে মানসিকভাবে স্বস্তি এবং তৃপ্তি পাওয়া যায় ।

রক্তদানের শর্ত সমূহ

রক্তদান একটি মহৎ কাজ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও রক্তদান সকলের জন্য নয়। রক্তদানের পূর্বে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি-

  • রক্ত দেয়ার পূর্বে রক্তদাতা কে অবশ্যই সুস্থ থাকতে হবে।
  • রক্তদাতার বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • রক্তদাতার ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি হওয়া প্রয়োজন।
  • রক্তদাতার রক্ত নিরাপদ আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
  • রক্তদানের পূর্বে কোন ধরনের এনার্জি ড্রিঙ্কস পান করা উচিত নয়।
  • ভরা পেটে রক্তদান না করায় শ্রেয়।

যাদের রক্তদান নিষেধ

যাদের রক্তদান পুরোপুরি নিষেধ বা যাদের রক্ত কখনোই নেয়া উচিত নয়-

  • ক্যান্সার বা ম্যালেরিয়ার মত জীবাণুঘটিত রোগে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি
  • এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী
  • মাদক সেবনকারী
  • যারা হেপাটাইটিস-বি এবং হেপাটাইটিস-সি পজিটিভ
  • গর্ভবতী মহিলা
  • যারা অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট আছে

রক্তদানের পর করণীয়

রক্ত দেয়ার পর কিছুটা মাথা ঘুরাতে পারে বা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব হতে পারে। তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, এটা স্বাভাবিক। তবে রক্ত দেয়ার পর হাঁটাহাঁটি না করাই ভালো। কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘন্টা রেস্ট করা করুন। 

রক্ত দানের পর কি কি খেতে হয়

রক্তদানের পর পর্যাপ্ত তরল খাবার খান। রক্তদানের পর রক্তের জলীয় অংশ পূরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং সেই সাথে জুস পান করুন।

শেষ কথা

একজন মুমূর্ষু রোগীকে রক্তদান করলে মানসিক তৃপ্তি পাওয়া যায়। সেই সাথে শারীরিকভাবেও রক্ত দানের উপকারিতা অনেক। তাই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসুন, জীবন বাঁচান।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url