সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন - মেনে চলতে যা করতে হবে

আমরা সকলেই আজীবন সুস্থ থাকতে চাই, সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। কিন্তু সুস্থ থাকতে যেভাবে জীবন যাপন করা দরকার আমরা সেটা মেনে চলি না। অধিকাংশ মানুষের বিশৃংখল জীবন যাপনের সাথে অভ্যস্ত। সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন মেনে না চললে সুস্থ থাকাটা প্রায় অসম্ভব। প্রায়শই আমরা প্রত্যাশা করি একরকম কিন্তু কাজ করি ভিন্ন রকম।

সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন

আমরা যে বিশৃংখল জীবনযাপনের সাথে অভ্যস্ত তা আমাদের শরীরে রোগ বালায় বয়ে নিয়ে আসে। অর্থাৎ আমরা রোগ জীবাণুকে আমাদের শরীরে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু আর নয়। এখনই সময় পূর্বের অসাবধানতাগুলো সংশোধন করে সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন মেনে চলার। কোন খাবার বা কোন মেডিসিন আপনাকে পরিপূর্ণ সুস্থতা দিতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলোর ভিতরে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত না করতে পারবেন।

সকালে ঘুম থেকে ওঠা

আপনার শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে চাইলে প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে এলার্ম ব্যবহার করুন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাসটা যদি আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সাথে অভ্যস্থ হয়ে যায়, তাহলে আর কোন অ্যালার্মের প্রয়োজন হবে না। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই নির্দিষ্ট সময়ের কাছাকাছি প্রতিদিন ঘুম থেকে জেগে উঠবেন। তবে প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগেই ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করাটা ভালো।

সকালের ব্যায়াম

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হালকা কিছু খেয়ে হালকা ব্যায়াম করুন। এই সময়ের ব্যায়ামের সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো খোলা বাতাসে হাঁটা বা দৌড়ানো। ভোরবেলার নির্মল বাতাস শরীর এবং মনকে সতেজ করে তোলে। প্রতিদিন হাঁটলে মেদ কমে, শরীরে ভালো কোলেস্টরেল বাড়ে, আর মন্দ কোলেস্টরেল কমে। নিয়মিত হাটা বিষন্নতা দূর করে এবং পেশির শক্তি বাড়ায়। হৃদপিণ্ড এবং ফুসফুসের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি খুবই দরকারি।

নিয়মিত গোসল

প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে হালকা গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করুন। হালকা গরম পানিতে নিয়মিত গোসল করলে বাত ব্যথা, অস্থি সন্ধির ব্যথা, পিঠের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা সহ আরো অন্যান্য ব্যাথার উপশম হয়। গরম পানির গোসলে সাইনোসাইটিসে উপকার পাওয়া যায়। যাদের শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রয়েছে তারা অনেক উপকার পাবেন।

নিয়মিত খাবার গ্রহণ

নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। সকাল ৭টা থেকে ৮টা মধ্যে সকালের নাস্তা করুন। বেলা ১১টায় হালকা নাস্তা করুন। দুপুরের খাবার ১টা থেকে ২টার মধ্যে খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। বিকেলে স্ন্যাকস জাতীয় খাবার খান। রাতের খাবার ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শেষ করুন। খাবারের তালিকা সবজি এবং ফল বেশি পরিমাণে রাখুন। দুপুরে ভারী খাবার খান কিন্তু রাতের খাবারটা সবসময়ই হালকা রাখার চেষ্টা করুন। দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম এবং রাতে খাওয়ার পরে একটু হাঁটাহাঁটি করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দিনে কয়েক কাপ রং চা পান করা শরীরের জন্য ভালো। চা শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পর্যাপ্ত পানি পান

সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত বিরতিতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে প্রতিদিন এক গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার পাকস্থলীর হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে। যে কোন খাবার গ্রহণের পূর্বে অল্প পরিমাণ পানি পান খাবার হজমে সহায়তা করে। শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করার জন্য পানি পান অত্যন্ত জরুরী।

কাজের মাঝে বিশ্রাম

বিশ্রাম কে কাজের অঙ্গ বলা হয়ে থাকে। তাই আপনি যে কাজের সাথেই সম্পৃক্ত থাকুন না কেন, কাজের মাঝে বিশ্রাম করুন। আপনি যদি অফিসে কাজ করেন তাহলে একটানা দুই ঘন্টার বেশি চেয়ারে বসে থাকবেন না। মাঝেমধ্যে চেয়ার থেকে উঠে অফিসের মধ্যে হাটাহাটি করুন। আপনি যদি কায়ক পরিশ্রম করেন তবুও আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী নিয়মিত বিরতিতে বিশ্রাম করুন। কাজের মধ্যে বিশ্রাম নিলে মস্তিষ্ক মানুষকে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা যোগায়।

সন্ধ্যায় আড্ডা

আপনার দৈনন্দিন রুটিনে সন্ধ্যায় রাখতে পারেন চায়ের আড্ডা। আড্ডায় অন্তর্ভুক্ত করুন বন্ধু অথবা অফিস কলিগ অথবা এলাকার কাছের ছোট ভাই, বড় ভাই। এই আড্ডা আপনাকে সারা দিনের কাজের ক্লান্তি ভুলে শরীরকে সতেজ করতে সহায়তা করবে।

পরিবারের সাথে আড্ডা

সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফিরে পরিবারকে সময় দিন। পরিবারের সাথে আড্ডার মধ্য দিয়ে কিছুটা ভাল সময় কাটান। এতে সারাদিনের কর্মক্লান্তি দূর হবে এবং মানসিক শান্তি পাবেন।

পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিনের কাজের ক্লান্তি ভুলে নতুন উদ্যমে পরের দিনের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ক্লান্তি, মানসিক চাপ, হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন। রাত দশটার মধ্যে ঘুমাতে পারলে শরীরের জন্য ভালো।

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার মতই প্রতিদিন রাতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি দেখার অভ্যাস পরিহার করুন। রাতে ঘুমানোর অভ্যাসটাও যদি দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে সেই নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীর ঘুমানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিবে। 

শেষ কথা

সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর রুটিন মেনে চলতে হবে তার অর্থ এই নয় যে হঠাৎ করেই পূর্বের সমস্ত অভ্যাস পরিবর্তন করে সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিন মেনে নিবেন। সকল মন্দ অভ্যাস পরিবর্তন করে নিয়মমাফিক জীবন যাপন একদিনের কাজ নয়। হঠাৎ করেই পরিবর্তন করতে গেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে সুস্থ থাকার দৈনন্দিন রুটিনে ফিরে আসুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url