হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়

হাঁপানি রোগ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। এই রোগটি যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে। আজকে আমরা হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় গুলো বিস্তারিতভাবে জানানোর চেষ্টা করব। হাঁপানির ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়
কারণ এই রোগটি প্রধানত ফুসফুস জনিত রোগ। তাই এই রোগকে অবহেলা না করে হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে রাখুন।

সূচিপত্রঃ- হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়

হাঁপানি একটি মারাত্মক এবং কষ্টদায়ক রোগ। হাঁপানি রোগ প্রধানত বংশগত কারণে হয়ে থাকে। তাই হাঁপানি রোগ সম্পর্কে জানুন। হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে সে অনুযায়ী জীবন যাপন করুন।

হাঁপানি  কি

হাঁপানি প্রধানত ফুসফুসের একটি রোগ। কারো হাঁপানি হলে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। যাদের হাঁপানি রয়েছে তাদের। বিভিন্ন কারণে যেকোনো সময় এই রোগটি দেখা দিতে পারে।

হাঁপানির কারণসমূহ

হাঁপানি হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অ্যালার্জি, বায়ু দূষণ, ফুসফুসে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ, আবহাওয়া এবং খাদ্যদ্রব্য সহ আরো বিভিন্ন কারণ রয়েছে। নিম্নে হাঁপানি হওয়ার কিছু কারণ বর্ণনা করা হলো।
(১) হাঁপানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো এলার্জি। যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের ধুলো, ধোঁয়া, তুলোর আঁশ, পশুপাখির লোম, রান্নাঘর ও বিছানার ধুলো, বাতাসে ভেসে থাকা ফুলের রেণু ইত্যাদি কারণে শ্বাসনালী এবং ফুসফুসের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার ফলে হাঁপানি বা এজমা এটাকে অনেক গুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও রাসায়নিক পদার্থের তীব্র গন্ধ এবং গ্যাসের গন্ধ হাঁপানি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে।
(২) অনেক সময় ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে হাঁপানি দেখা দিতে পারে।
(৩) হাঁপানি বাড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ধূমপান। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যেকোন ধূমানি হাঁপানি সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। এমনকি গর্ভবতী মহিলা ধূমপান করলে বা কোনভাবে ধূমপানের ধোঁয়া তার ভেতরে প্রবেশ করলে শিশুরা হাঁপানি হতে পারে।
(৪) হাঁপানের আরেকটি কারণ হলো ঋতু পরিবর্তন। ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বর, সর্দি কাশি হাঁপানের সমস্যা বাড়াতে সাহায্য করে।
(৫) হাঁপানি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো বংশগত। হাঁপানিরও প্রধানত বংশগতভাবেই হয়ে থাকে।
(৬) অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি অথবা ফ্রিজের পানি পান করা কিংবা জাং ফুট বা মুখরোচক খাবার খেলে হাঁপানির সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

হাঁপানির লক্ষণ

(১) যাদের হাঁপানি রয়েছে তাদের শাসনালী সংঘটিত হয়ে যাওয়ার ফলে ঊর্ধ্বশ্বাস অথবা নিম্নসার গ্রহণে সমস্যা হয় এবং কষ্ট হয়।
(২) অতিরিক্ত কাজ করার সময় বা ঘুমানোর সময় কাশির উদ্রেক হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় দম বন্ধ হয়ে আসে।
(৩) হাঁপানিতে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের ফুসফুসে শোঁ শোঁ  শব্দ হয়।
(৪) হাঁপানি আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত সামনের দিকে ঝুঁকে বসার চেষ্টা করে। শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরগতির হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতিধ্বনি শোনা যায়।
(৫) রোগীদের পাল্স ওঠানামা করে। শরীর নিলাব বর্ণের হয়ে যায় এবং হৃদপিন্ডের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
(৬) প্রাথমিক পর্যায়ে হাঁপানি দেখা দেওয়ার পরে ১-২ ঘন্টার মধ্যে হাঁপানি কমে যায়।
(৭) প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ না করলে প্রকট আকার ধারণ করে।

হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়

কফিঃ
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে কফি অন্যতম। হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে কফি বেশ কার্যকর। দিনে সর্বোচ্চ তিন কাপের বেশি কফি খাওয়া উচিত নয়। কফির বহুবিদ উপকার থাকা সত্ত্বেও বেশি পরিমাণে পান করলে ক্ষতি হতে পারে।
সরিষার তেলঃ
হাঁপানির প্রকোপ কমাতে সরিষার তেলের সাথে কর্পোর মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। পরিমাণ মতো কর্পূর এবং সরিষার তেল একত্রে মিশিয়ে গরম করে নিন। এরপর সেই তেল গলা এবং বুকে আলতোভাবে মালিশ করুন। হাঁপানের উপসর্গ কমে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে থাকুন। আশা করা যায় এভাবে কিছুক্ষণ মালিশ করার পরে শ্বাসনালী পরিষ্কার এবং শ্বাস গ্রহণের ক্ষেত্রে কষ্ট কমে যাবে। 
রসুনঃ
হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করতে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহার করতে পারেন। রসুন যে শুধু হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে কার্যকর তা নয়। হার্ট ভালো রাখতেও রসুনের ভূমিকা রয়েছে। তাই হাঁপানি রোগীদের পাশাপাশি সকলকে পরিমাণ মতো রসুন খাওয়া উচিত। নিয়মিত রসুন খেলে হাঁপানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।।
ডুমুরঃ
ডুমুরের মধ্যে ঔষধি গুণ রয়েছে। পথ তুলে ফেলা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমানোর ক্ষেত্রে ডুমুর বেশ কার্যকর। ক্ষেত্রে কয়েকটি শুকনো ডুমুর পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন।
সকালে সেই ডুমুর ভেজানো পানি এবং ডুমুর খেয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত কয়েক মাস খাওয়ার ফলে আপনার হাঁপানের সমস্যা কমে যাবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হ্রাস পাবে।
আদাঃ
আদা শুধু তরকারিতে মসলা হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। রোগ সারানোর ক্ষেত্রেও আদার অনেক গুণ রয়েছে। আদা হাঁপানি সহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসার জন্য পেশ পরিচিত। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো মেথি, আদার রস এবং মধু একত্রে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় এই রস পান করতে হবে। নিয়মিত পান করার ফলে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া আপনি এর সাথে লবণ মিশিয়ে পান করতে পারে।
লেবুঃ
লেবু প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ফল। আপনি হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে লেবুর রস পান করতে পারেন। এক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো লেবুর রস এবং চিনি মিশিয়ে শরবত বানিয়ে পান করুন। হাঁপানি রোগ থেকে অনেকখানি আরাম পাবেন।
পেঁয়াজঃ
পেঁয়াজ শুধু রান্নাঘরের কাজেই লাগে না। রূপচর্চা সহ বিভিন্ন রোগ সারাতেও পেঁয়াজের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দূর করার জন্য পেঁয়াজের কার্যকারিতা অনেক বেশি।
মধুঃ
মধু হলো সর্ব রোগের ঔষধ। হাঁপানি থেকে থাকতে হলে মধু খাওয়া উচিত। এক টেবিল চামচ মধুর সাথে পরিমাণ মতো দারুচিনি গোড়া মিশিয়ে নিয়মিত খেলে হাঁপানি কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট অনেকখানি কম হয়। এছাড়াও মধু সর্দি কমাতেও সাহায্য করে। তাই হাঁপানি থেকে মুক্তি পেতে আপনি মধু খেতে পারেন।
ল্যাভেন্ডার তেলঃ
হাঁপানি থেকে মুক্তির জন্য আপনি ল্যাভেন্ডার তেল ব্যবহার করতে পারেন। হাঁপানির উদ্রেক হলে পরিমাণ মতো গরম পানিতে  ৫-৬ ফোঁটা ল্যাভেন্ডার তেল মিশিয়ে ধীরে ধীরে এর ভেপার গ্রহণ করুন। হাঁপানের সমস্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা ও কম হবে।

হাঁপানি প্রতিরোধের উপায়গুলি

(১) হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে হাঁপানি শুরু হওয়ার ট্রিগার গুলো জানতে হবে। অর্থাৎ কোন কোন জিনিসের সংস্পর্শে আসলে হাঁপানি শুরু হয় সেগুলো জানতে হবে। এবং সেই জিনিসগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। একেকজনের একেক রকম ট্রিগার হয়ে থাকে।
যেমন কারো অতিরিক্ত তাপের ফলে হাঁপানি শুরু হয়, আবার অনেকের বালিশের তুলোর ডাস্টের ফলে হাঁপানি সৃষ্টি হয়, আবার কারো অতিরিক্ত রোদ্রে থাকলে হাঁপানি শুরু হয়, অনেকের বেশি ঠান্ডায় বা ঠান্ডা পানি খেলেও হাঁপানি শুরু হয়। কোন ট্রিগারটির কারণে আপনার হাঁপানি শুরু হয় সে সকল ট্রিগার গুলো এড়িয়ে চলুন।
(২ )  পাখির পালক, পশুর লোম এবং ধুলাবালি যুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
(৩) আপনি যে ঘরে থাকেন বা যে বাসায় বসবাস করেন সেই বাসা, ঘর এবং আপনার বিছানা সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। ভেজা এবং স্যাঁতসেতে জায়গায় ছত্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি থাকে এক্ষেত্রে সে সকল জায়গায় এড়িয়ে চলুন।
(৪) হাঁপানি প্রতিহত করতে পাখির পালকের বালিশ, কূলের কম্বল, অথবা অন্যান্য তুলা যেগুলো ডাস্ট তৈরি করে সে সকল তোলার তৈরি বালিশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। হাঁপানি আক্রান্ত রোগীর বিছানা প্লাস্টিক কাভার দিয়ে মুড়িয়ে রাখা উচিত। এবং রোগীর করা কাপড়-চোপড় এবং অন্যান্য কাপড় সবসময় গরম পানি ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত।
(৫) বাচ্চাদের ক্ষেত্রে তুলোর পুতুল, সব টয় এবং নরম তুলো বা নরম কাপড় দিয়ে তৈরি করা পান্ডা বা অন্যান্য পুতুল ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন।।
(৬) যাদের হাঁপানি রয়েছে তারা অবশ্যই ধূমপান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। পরোক্ষ ধূমপান থেকেও দূরে থাকতে হবে।
(৭) হাঁপানি রোগীদের ক্ষেত্রে সুগন্ধি প্রসাধনী, পড়া জীবাণুনাশক এবং কড়া গন্ধ রয়েছে এরকম জিনিস ব্যবহার করা উচিত নয়।
এই পোস্টে হাঁপানি থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। হাঁপানি রোগের ক্ষেত্রে এগুলো কোন ট্রিটমেন্ট নয়। তাই যাদের হাঁপানি হয়েছে বা হাঁপানির সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে।

হাঁপানি এমন একটি রোগ যার কোন নির্দিষ্ট বয়স নেই। যে কোন বয়সের মানুষই হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁপানি রোগটি প্রধানত বংশ পরস্পরাই হয়ে থাকে। এই রোগটি এমন একটি রোগ যার শিশুকালে প্রকট ভাবে দেখা দেয় মাঝ বয়সে এর প্রকটতা কম থাকে। এবং বয়োজ্যেষ্ঠ কালে আবার এই রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। তাই হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে উপরে আলোচিত বিষয় গুলো মেনে চলা উচিত। আশা করি আপনারা আজকের আলোচিত হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে হাঁপানি থেকে দূরে থাকতে পারবেন কিংবা হাঁপানির কষ্টকে কম করতে পারবেন। আজকের এই পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসলে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারেন। কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url