পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় - পেটের মেদ কমানোর খাবার তালিকা
আমরা প্রায়শই পেটের মেদ বা চর্বি বা ভুড়ি নিয়ে খুবই অস্বস্তিতে থাকে। এই অস্বস্তি দূর করতে চাইলে আমাদের গবেষণায় পাওয়া পেটের চর্বি বা কমানোর সহজ উপায় গুলো অবলম্বন করুন, তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার পেটের চর্বি কমাতে সফল হবেন।
আমরা আমরা এই আর্টিকেলে পেটের চর্বি কমানোর সহজ উপায় গুলোর পাশাপাশি পেটের চর্বি বা মেদ কমানোর খাবারের কিছু তালিকাও সংযোজন করেছি। আশা করি এই উপায় গুলো অবলম্বন করে এবং খাবারের তালিকা অনুযায়ী নিয়মিত খাবার খেলে আপনি আপনার পেটের চর্বি কমাতে পারবেন।
আপনি যদি আপনার পেটের চর্বি বা মেদ কমাতে চান, তাহলে নিম্নোক্ত উপায় গুলো
অবলম্বন করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার পেটের চর্বি বা মেদ নিয়ে অস্বস্তি দূর
হবে বলে আশা করি।
ট্রান্সফ্যাট খাবার বন্ধ করা
পেটের চর্বি যাতে না হয় সেজন্য সর্বপ্রথমে আমাদের ট্রান্সফ্যাট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ ট্রান্সফারযুক্ত যে সকল খাবার রয়েছে সে খাবারগুলো বর্জন করতে হবে। যেমন কেক, কুকিজ, অতিরিক্ত ডালডাযুক্ত খাবার, তৈলাক্ত খাবার, ভাজাপোড়া ইত্যাদি।
৬ বছর ধরে কয়েকটি বানরের উপরে গবেষণা করা হয়েছিল। কিছু বাঁদরকে নিয়মিত ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার দেয়া হয় এবং কিছু বাঁদরকে ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার দেয়া হয় না। তাতে গবেষণায় দেখা যায়, যে সকল বাঁদুরকে ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ভুঁড়ি বেড়ে গেছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়াও ট্রান্সফ্যাট বিভিন্ন রোগের সাথে কানেক্টেড যেমন স্থূলতা ও হৃদযন্ত্রের রোগ।
জীবন থেকেই স্ট্রেস কমানো
স্ট্রেস আমাদের শরীরে কর্টিসেল নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে। কর্টিসেল হরমোন কে মাঝে মধ্যে স্ট্রেস হরমোন বলা হয়। এই কর্টিসেল হরমোন পেটে চর্বি জমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শরীরে কর্টিসেল হরমোন বেশি নিঃসৃত হয় তাদের ক্ষুধার ভাবটাও বেশি দেখা যায়। তারা প্রচুর ক্ষুধা অনুভব করেন। একই সাথে কর্টিসেল হরমোন পেটে চর্বি জমাতে সাহায্য করে।
আসলে আমাদের প্রফেশন গুলোই স্ট্রেসফুল প্রফেশন। যার কারণে আমরা চাইলেও
স্ট্রেসটাকে বর্জন করতে পারি না। তাই স্ট্রেস কমাতে ছুটির দিনগুলোকে কাজে লাগান।
ছুটির দিনগুলোতে পরিবারকে সময় দিন। পরিবারের সাথে বাইরে ঘুরতে যান অথবা খেলাধুলা
করে সময় কাটান। তাতে আপনার স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে।
চিনি যুক্ত খাবার কমানো
আপনি যদি আপনার শরীরের চর্বি কমাতে চান তাহলে আপনাকে চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া কমাতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি। এছাড়াও গবেষণায় আরো পাওয়া গেছে, চিনির মধ্যে যে ফ্রূক্টোজ থাকে তা অন্যান্য ক্রনিক রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর যারা সফট ড্রিংকস খাচ্ছেন তাদের জন্য উল্লেখ্য যে, সফট ড্রিংকস নরমাল মিষ্টি খাবারের থেকে বেশি খারাপ। কারণ আপনি যখন সফটিং খাচ্ছেন তখন আপনি জানেন না আপনি কতটুকু মিষ্টি খাচ্ছেন।
সফট ড্রিংকস গুলোতে ফসফরাস এবং ফসফরিক এসিডের কম্বিনেশন থাকে যার ফলে আপনার
জিহ্বা মিষ্টির পুরো স্বাদ পায় না। যার কারণে আপনি বুঝতে পারেন না ঠিক কতটুকু
মিষ্টি খাচ্ছেন। আমরা যখন মিষ্টি কোন খাবার খায় তখন অনেক সময় ধরে চিবিয়ে
খাওয়ার ফলে জিহ্বা তার স্বাদটা পুরোপুরি নিতে পারে এবং ব্রেনের সিগন্যাল পৌঁছাতে
পারে আমি কতটুকু মিষ্টি খাচ্ছি। অন্যদিকে সফট ড্রিঙ্কস তরল হওয়ার কারণে সরাসরি
পেটের ভিতর চলে যায় যার ফলে মিষ্টির স্বাদ গ্রহণ করে ব্রেনের সিগন্যাল পৌঁছাতে
তারতম্য হয়।
নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমটাকে আমরা অনেকে গুরুত্বসহকারে দেখি না। কিন্তু ঘুম আমাদের স্বাস্থ্যের
অন্যান্য অনেক কিছুর সাথেই কানেক্টেড। শরীরের ওজনের সাথে ঘুমের একটা প্রভাব
রয়েছে। একটি গবেষণায় ৬৮০০০ মহিলাদের উপর একটি গবেষণা করা হয় এবং তা ১২ বছর
পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাতে দেখা যায়, যারা সাত ঘন্টা বা তার বেশি সময় ঘুমিয়েছেন
তার থেকে যারা পাঁচ ঘন্টা বা তার কম সময় ঘুমিয়েছেন তাদের ওজন উল্লেখযোগ্য হারে
বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাদা কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ
শরীরের চর্বি কমাতে হলে সাদা কার্বোহাইড্রেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অর্থাৎ সাদা ভাত, সাদা রুটি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যারা মোটা মানুষ তারা যদি প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম সাদা কার্বোহাইড্রেট খান তাহলে তাদের চর্বি কমে যায়। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রেও চর্বি পরিমাণ কমেছে যদি তারা ৫০ গ্রামের কম সাদা কার্বোহাইড্রেট খান।
এখন কথা হচ্ছে সাদা ভাত সাদা রুটি খাওয়া যদি কমিয়ে ফেলেন তাহলে তাহলে আপনি কি
খাবেন। সাদা ভাত এবং সাদা রুটির পরিবর্তে আপনি খেতে পারেন বাদামি ভাত বা বাদামি
রুটি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সাদা ভাত বা সাদা রুটি খেয়েছেন তাদের
তুলনায় ১৭ শতাংশ পেটের চর্বি কমে গেছে যারা বাদামি ভাত বা বাদামী রুটি
খেয়েছেন।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
পেটের চর্বি বা ভুড়ি কমানোর জন্য আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, ডাল এগুলো খেতে পারেন। এ সকল খাবার যখন পেটে যায় তখন পানি বা লিকুইড শোষণ করে একটি জেলের মত পদার্থ তৈরি করে যাতে পেট ভরা ভরা অনুভব হয়। ফলে কম খাবারই খেলেই পেটের ক্ষুধা নিবারণ হয়।
পাশাপাশি শরীর অতিরিক্ত ক্যালরি নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না। যা আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করে। ১১০০ জন মানুষের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১০ গ্রাম আঁশযুক্ত খাবার বাড়ানোর ফলে পেটের চর্বি কমেছে ৩.৭ শতাংশ।
প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া
প্রতিদিন প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ আপনাকে পেটের চর্বি কমাতে সহায়তা করবে।
প্রোটিন যুক্ত খাবার খেলে ক্ষুধা লাগে কম, যার ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের
প্রয়োজন হয় না এবং পেটে চর্বি জমতে পারে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যারা
প্রতিদিন খাবারে বেশি পরিমাণ প্রোটিন খায় তাদের পেটে চর্বি জমার পরিমাণ, যারা কম
প্রোটিন খায় তাদের পেটে চর্বি জমার পরিমাণের থেকে অনেক কম।
চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া
পেটের চর্বি কমাতে নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খেতে পারেন। চর্বিযুক্ত মাছে বিদ্যমান
ওমেগা-৩ ফ্যাট মানুষের লিভার এবং পেট উভয়েরই চর্বি কমাতে খুবই কার্যকর।
নিয়মিত দৌড়ানো
পেটের চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে সব থেকে কার্যকরী উপায় হল নিয়মিত দৌড়ানো। যদিও অন্যান্য কাজের থেকে এটা একটু কঠিন কাজ, তাই অল্প সময় হলেও নিয়মিত দৌড়ানোর অভ্যাস করুন। তবে আপনি আপনার পেটের চর্বি কি পরিমান কমাতে চান সেটা নির্ভর করবে আপনি সপ্তাহে কতদিন দৌড়াচ্ছেন বা কত সময় ধরে দৌড়াচ্ছেন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url