গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন

গ্রীষ্মকালে ঘামাচির যন্ত্রণা কমানোর জন্য গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন সে পদ্ধতি গুলো জানা থাকলে শিশুকে ঘামাচি থেকে দূরে রাখতে পারবেন। আজকে আমরা গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করব।
গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন
আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং প্রচন্ড গরমের ফলে সাধারণত ঘামাচি হয়ে থাকে। যে সকল শিশুর স্বাস্থ্যবান বা মোটা তাদের শরীরে বেশিরভাগ ভাজ থাকে সেই ভাজগুলোতে প্রধানত ঘামাচি দেখা যায়।

সূচিপত্রঃ- গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন


গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে শিশুদের মাথায়, ঘাড়ে, গালে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচি হয়ে থাকে।এই ঘামাচি বা হিট র‍্যাশ সকলের কাছেই সাধারন। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে ঘামাচি বেশি যন্ত্রণাদায়ক। ঘামাচি সাধারণত ত্বকের ওপরে লালচে বর্ণের ছোট ছোট ফুসকুড়ির মত দেখা দেয়। বড়দের চাইতে শিশুরা ঘামাচিতে বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে।

ঘামাচি আসলে কী

গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমের কারণে শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়ার ফলে ঘামের চাপে ঘর্মগ্রন্থি বা ওই নালিটিই ফেটে ত্বকের নিচে ঘাম জমতে শুরু করে। ত্বকের নিচে ঘাম জমে থাকার ফলেই ঘামাচির দেখা দেয়।
ঘামাচি বা প্রিকলি হিট সাধারণত ছোট ছোট খোসকার মতো এবং লালচে বর্ণের ফুসকুড়ির মত দেখায়। ঘামাচি হলে ত্বক প্রচন্ড চুলকায়।

ঘামাচির লক্ষণ

বিভিন্ন কারণে ঘামাচি হতে পারে। সাধারণত অতিরিক্ত গরমে বেশি ঘামার কারণে ত্বকের নিচে ঘাম জমার ফলে ঘামাচি দেখা দেয়। ঘামাচি হলে ত্বক প্রচন্ড চুলকায় এবং জ্বালাপোড়া করে। এছাড়াও শারীরিক দুর্বলতা, ঘামে অসহনশীলতা, ক্ষুধামন্দা, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং একজিমার রূপ ধারণ করতে পারে।

গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন

অতিরিক্ত গরমে ঘামাচির কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের কষ্ট এবং যন্ত্রণার পরিমাণ বেশি। তাই শিশুদের ঘামাচি হলে অতিরিক্ত যত্ন এবং পরিচর্যা নেয়া উচিত। তাই জেনে রাখুন গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন সেই সম্পর্কে।

সুতির পোশাক পরানঃ

শিশুদের ত্বক সাধারণত বেশি সংবেদনশীল এবং নরম হয়ে থাকে। তাই গরমের সময় বা গ্রীষ্মকালে শিশুদেরকে সুতির কাপড় পরান। সুতির পোশাক পড়ালে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যান্য কাপড়ের তুলনায় সুতি কাপড় শিশুর ক্ষেত্রে বেশ আরামদায়ক।

গরম পোশাক পরাবেন নাঃ

গ্রীষ্মকালে শিশুদেরকে গরম পোশাক পরানো থেকে বিরত থাকুন। গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে অনেক সময় মেঘ দেখা দিলে, বৃষ্টি হলে বা সন্ধ্যাবেলায় অতিরিক্ত বাতাস হলে অনেক অভিভাবক শিশুদেরকে গরম পোশাক পরিয়ে থাকেন।
কিন্তু যেহেতু এটা শীতকাল নয় সে তো শিশুদের গরম পোশাকে প্রয়োজন নেই। গরম পোশাক ব্যবহারের ফলে শিশুদের ঘামাচি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে গরম পোশাক পরানোর ফলে শিশুর শরীর ভেতরে গরমে ঘেমে ঘামাচি দেখা দিতে পারে।

তরল ও পানিঃ

শিশুরা যেহেতু তার মায়ের কাছ থেকে সফল খাদ্য এবং পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকে। এবং এই খাদ্য পুষ্টি উপাদান গুলো শিশু তার মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে পেয়ে থাকে। শিশুর মা যে খাবারগুলো খেয়ে থাকেন মূলত সেখান থেকেই শিশুরা পুষ্টিগুণ পেয়ে থাকে। শিশুকে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে হলে পিএইচ এর মান ঠিক রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুর মাকে পর্যাপ্ত পানি বা পানি জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের জুস পান করতে পারে।

শিশুকে রোদ থেকে দূরে রাখুনঃ

গরমকালে রোদের তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে শিশুদেরকে রোদের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখুন। তবে সূর্যোদয়ের পর ভিটামিন ডি এর জন্য শিশুকে অল্প সময়ের জন্য রোড লাগাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা বা পাঁচটা পর্যন্ত শিশুকে রোদ থেকে দূরে রাখবেন। তবে এই সময়টি স্থান ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

বিনা প্রয়োজনে শিশুকে ঢেকে রাখবেন নাঃ

নবজাতক বা শিশুরা অধিকাংশ সময় বিছানায় শুয়ে থাকে। এজন্য তাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। তাই বিনা প্রয়োজনে শিশুদেরকে তোয়ালে বা যে কোন কাপড় দিয়ে ঢেকে না রাখাই ভালো।

নারকেল তেলঃ

গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। নারিকেল তেল শিশুর ত্বকে জলীয় ভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘুমানোর আগে শিশুর সমস্ত শরীরে নারিকেল তেল ভালোভাবে মালিশ করে দিন।
সকালবেলায় পরিষ্কার সুতির কাপড় দিয়ে শিশুর শরীর ভালোভাবে মুছে দিন। এক্ষেত্রে খাঁটি নারিকেলের তেল ব্যবহার করা উত্তম।

ট্যালকম পাউডারঃ

অতিরিক্ত ঘামাচি দূর করতে শিশুদের ত্বকে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে পারে। ট্যালকম পাউডার ঘামাচি দূর করার পাশাপাশি চুলকানি কমাতেও সাহায্য করে। শিশুকে ভালোভাবে গোসল করানোর পর সমস্ত শরীরে ট্যালকম পাউডার ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। কোন ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। 

আইস কিউবঃ

গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি দূর করতে আইস কিউবের ব্যবহার সহজ এবং খরচ নেই বললেই চলে। একটি আইস কিউব নিয়ে একটি কাপড়ের মধ্যে মুড়িয়ে শিশুর শরীরে ঘামাচির স্থানগুলোতে আলতো ভাবে মালিশ করুন। তবে দুই তিন মিনিটের বেশি মালিশ না করাই ভালো। কারণ অতিরিক্ত বরফ মালিশ করার ফলে শিশুকে ঠান্ডা লাগতে পারে। আইস কিউব মালিশ করলে শিশু দ্রুত আরাম পাবে এবং ঘামাচির মাত্রা কমে যাবে।

নিমের পেস্টঃ

চর্ম রোগের চিকিৎসার জন্য নিম পাতার ব্যবহার প্রাচীন এবং খুব কার্যকরী। গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি দুর করার জন্য আপনি নিমপাতা বা নিমের পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতায় বিদ্যমান অ্যান্টিসেপটিক উপাদান ত্বকের ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এক্ষেত্রে নিমপাতা ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
শুকনো নিম পাতা ভালোভাবে বেটে পরিমান মত পানি মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর নিম পাতার পেস্ট শিশুর সমস্ত শরীরে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন। যেকোনো বয়সের মানুষ ঘামাচি দূর করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

গোলাপ জলঃ

গরমে ঘামাচি দূর করার জন্য গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। ২০০ মিলি গোলাপ জলের সাথে চার টেবিল চামচ মধু এবং পরিমাণ মতো পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ফ্রিজে রেখে মিশ্রণটি আইস কিউব করে নেন। পরিমাণ মতো আইস কিউব একটি কাপড়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে শিশুর গায়ে আলতো ভাবে বুলিয়ে নিন। এক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে শিশুকে যেন ঠান্ডা না লাগে। অর্থাৎ বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে শিশুর ঘামাচির চুলকানি এবং খামাচি কমে যাবে।

শশাঃ

ঘামাসের যন্ত্রণা কমাতে শসা ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে শশা পাতলা করে কেটে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। এবং শিশুর শরীরে মালিশ করলে শিশু ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।

অ্যালোভেরা জেলঃ

শরীরে ত্বকের জন্য এলোভেরা জেল খুব কার্যকর। এলোভেরা জেল এ রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে প্রতিহত করে। অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল বের করে ভালোভাবে ফেটে পেস্ট করে নিতে হবে। এরপর এই পেস্ট শিশুর ঘামাচির স্থানগুলোতে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এলোভেরার জেল বা অ্যালোভেরার পাতা পাওয়া না গেলে অ্যালোভেরা সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে খুব দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।

পাকা পেঁপেঃ

পেঁপে শরীর এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ফল। ঘামাচি দূর করতেও পেঁপের জুড়ি নেই। এজন্য পাকা পেঁপে ভালোভাবে ফেটে পেস্ট করে নিতে হবে। শিশুর শরীরে ঘামাচির স্থানগুলোতে এই পেস্ট ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শিশুর ঘামাচির যন্ত্রণা কমার পাশাপাশি ঘামাচি ও কমে যাবে।

উপরে উল্লেখিত গরমে শিশুর ত্বকে ঘামাচি হলে যা করবেন সেই পদ্ধতিগুলো আপনার শিশুকে ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ঘামাচি দূর করার আলোচিত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সব পদ্ধতি এর সকল শিশুর জন্য উপযুক্ত হবে এমনটি নয়। কারো কারো শরীরে কিছু কিছু জিনিস ব্যবহার করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি কোন পদ্ধতিটি ব্যবহার করবেন সেটি জানার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url