ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
    গরমের দিন অপছন্দ করার প্রধান কারণ হলো ঘামাচি। ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে ঘামাচি
    দূর করার ঘরোয়া উপায় জানতে হবে। আজকে আমরা ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
    সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
  
  সূচিপত্রঃ- ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
    গ্রীষ্মকালের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে ঘামাচি অন্যতম। ঘামাচি হলে ঘামাচি
    আক্রান্ত স্থানে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি হয়। ঘামাচি গুলো সাইজে ছোট
    হলেও এটি খুব অস্বস্তি কর। ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে দূরে থাকতে হলে নিজেকে
    প্রতিনিয়ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। 
  
  ঘামাচি কী
    ঘামাচি হলো এক প্রকার চর্ম রোগ। স্বাভাবিকভাবেই ঘাম থেকে ঘামাচি শব্দটির
    উৎপন্ন। গ্রীষ্মকালে আমাদের ত্বকে লাল বর্ণের ফুসকুড়ির মত যে জিনিসগুলো দেখা
    যায় সেগুলোই ঘামাচি বা হিট র্যাশ (Heat rash)।
  
  গরমে ঘামাচি হওয়ার কারণ
    প্রধানত ঘামের কারণেই ঘামাচি হয়ে থাকে। মানুষের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থিতে স্টেফ
    এপিডারমাইডিস নামক এক ধরনের জীবাণু থাকে। এই জীবাণুর কারণে ঘামাচি হয়ে থাকে।
    স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মকালে বেশি পরিমাণ ঘাম ঝরে।
  
  আরো পড়ুনঃ খুশকি দূর করার উপায়
  
    অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে বেশি পরিমাণে ধুলাবালি এবং ডাস্ট জমে। শরীরে ত্বকের
    মৃত কোষ গুলোর সাথে অতিরিক্ত ধুলোবালি জমার কারণে লোমকূপ দিয়ে পর্যাপ্ত ঘাম
    নির্গত হতে পারে না। ফলে স্টেফ এপিডারমাইডিস এর কারণে ঘামাচির উৎপত্তি হয়।
  
  ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
    সকলেই গরমে ঘামাচির অস্বাভাবিক যন্ত্রণা এবং বিরক্তি থেকে মুক্তি পেতে চায়।
    ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার বা ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়
    গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
  
  বরফঃ
  
    এই গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে যে সকল স্থানে ঘামাচি রয়েছে সেখানে বড় ঘষতে
    পারেন। এছাড়াও ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা পানির ব্যবহার বেশ আরামদায়ক।
  
  মুলতানি মাটিঃ
  
    ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে মুলতানি মাটির ব্যবহার অন্যতম।
    মুলতানি মাটির পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এই পেস্ট
    তৈরির জন্য ৪/৫ টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে ২/৩ টেবিল চামচ গোলাপ জল এবং
    পরিমাণ মতো পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ঘামাচি আক্রান্ত স্থানগুলোতে এই পেস্ট
    লাগিয়ে দুই থেকে তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এই
    ভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এই মুলতানি মাটি চর্ম রোগের ওষুধ
    হিসেবেও বেশ কার্যকর।
  
  শসাঃ
  
    শসা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড করার পাশাপাশি ঘামাচির ক্ষেত্রেও উপকারী। ঘামাচির
    চুলকানি দূর করতে শসার কার্যকারিতা অনেক। শসা পাতলা করে কেটে নিয়ে ঘামাচির
    স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করুন। ঘামাচির স্থান ঠান্ডা হবে এবং
    চুলকানি কমবে। ৩০ মিনিট পরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন। এছাড়াও শসার জুসের সাথে
    পরিমাণ মতো লেবু মিশিয়ে ঘামাচির স্থানে মালিশ করতে পারেন। এভাবে ব্যবহার করেও
    ঘামাচি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 
  
  অ্যালোভেরা জেলঃ
  
    রূপচর্চার ক্ষেত্রে এলোভেরার গুনাগুনের অভাব নেই। এছাড়াও
    অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ঘামাচি দূর
    করার ক্ষেত্রে এলোভেরার ব্যবহার অনেক ফলপ্রসু। অ্যালোভেরার পাতা থেকে এলোভেরা
    জেল বের করে ভালোভাবে পেটে পেস্ট করে নিন। এরপর এই পেস্ট ঘামাচির স্থানে
    ভালোভাবে লাগিয়ে মালিশ করুন।
আরো পড়ুনঃ হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায়
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে
    ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। অ্যালোভেরা পেস্ট এর সাথে আপনি পরিমাণ মতো হলুদও
    মিশিয়ে নিতে পারেন। অ্যালোভেরার পেস্ট হল ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
  
  চন্দনঃ
  
    প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চা এবং রোগ সারানোর জন্য চন্দন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
    ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রেও এই চন্দনের ব্যবহার অনেক। পরিমাণ মতো চন্দন বাটা বা
    চন্দন গুঁড়ার সাথে গোলাপজল ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। শরীরের যেখানে
    ঘামাচি রয়েছে সেখানে এই মিশ্রণটি লাগালে দ্রুত উপকার পাবেন। চন্দন বাটা বা
    চন্দন গুড়ার সাথে আপনি ধনেপাতা বাটা মিশিয়ে পেস্ট বানাতে পারেন। ধনেপাতায়
    বিদ্যমান অ্যান্টিসেপটিক গুণ চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এবং চন্দন চুলকানি ও
    জ্বালাপোড়া উভয়ই  দূর করে।
  
  বেকিং সোডাঃ
  
    এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সাথে এক কাপ ঠান্ডা পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নেই। এরপর
    পরিষ্কার কাপড় দিয়ে বেকিং পাউডার ভেজানো পানি শরীরে সকল স্থানে লাগান।
    ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।
  
  নিমপাতাঃ
  
    প্রকৃতির ডাক্তার হলো নিমগাছ। নিম গাছের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। ত্বকের যেকোনো
    সমস্যার জন্য নিম পাতা খুব কার্যকর। নিম পাতায় বিদ্যমান এন্টি ব্যাকটেরিয়াল
    উপাদান ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করে। পরিমাণ মতো নিমপাতা পরিমাণ মতো পানিতে
    ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিন।
এরপর নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি ঠান্ডা করে সমস্ত শরীরে
    ভালোভাবে মালিশ করুন। পাঁচ-দশ মিনিট ভালোভাবে মালিশ করার পর ধুয়ে ফেলুন।
    অতিরিক্ত ঘামাচি হলে দিনে চার-পাঁচবার এইভাবে ব্যবহার করুন।
  
  লেবুর রসঃ
  
    আপনার ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় হতে পারে লেবুর রসের সঠিক ব্যবহার। লেবুর
    রসে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ঘামাচি দূর করতে সাহায্য করে। দ্রুত
    উপকার পেতে পরিমান মত পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
  
  আলুর থেরাপিঃ
  
    ঘামাচির সমস্যা দূর করতে আলু থেরাপি খুব কার্যকর। পরিমাণ মতো আলু পাতলা করে
    কেটে ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে ঘষুন। দিনে অন্তত দুইবার এভাবে আলু
    থেরাপি দিন। ঘামাচির চুলকানি কম হওয়ার পাশাপাশি ঘামাচি দূর হবে।
  
  ফিটকিরিঃ
  
    পানি বিশুদ্ধকরণ কিংবা তার শেভিং লোশনের পরিবর্তে ফিটকিরির ব্যবহার সর্বজন
    স্বীকৃত। এই ফিটকিরি দ্বারা ঘামাচি ও দূর করা সম্ভব। ফিটকির মিশ্রিত পানি
    ঘামাচির স্থানে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  
  লাউঃ
  
    ঠান্ডা সবজি হিসেবে লাউকে আমরা সবাই চিনি। ঘামাচি দূর করার জন্য লাউকে আগুনে
    ভালোভাবে ঝলসে নিন। এরপর সেই লাউ থেকে রস বের করে পরিমাণ মতো খেয়ে নিন।
    ঘামাচির যন্ত্রণা কমার পাশাপাশি ঘামাচি দূর হবে। ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া
    উপায় গুলোর মধ্যে লাউয়ের ব্যবহার সহজ এবং সহজলভ্য।
  
  বেসনঃ
  
    রূপচর্চার জন্য বেসনের ব্যবহার অনেক। এই বেসন রান্নাঘরেই পাওয়া যায়। ঘামাচি
    দূর করতে পরিমাণমতো বেসনকে ভালোভাবে পানিতে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নেই। এই
    পেস্ট ঘামাচির স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে খুশকি দূর করবেন
বেসন শুকিয়ে
    গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আশা করা যায় আপনি ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে
    মুক্তি পাবেন। বেসনের ব্যবহার আপনার ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় হতে
    পারে।
  
  ওটমিল বাথঃ
  
    ঘামাচি দূর করার জন্য আপনি ওটমিল ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে বাথ ট্যাবে আধা
    কাপ ওটমিল ভিজিয়ে রাখুন। বাথ ট্যাবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ডুবে থাকুন। অথবা ওটমিল
    মেশানো পানি আপনি শরীরে মাখলেও উপকার পাবেন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ঘামাচির
    অসহ্য চুলকানি থেকে রেহাই পাবেন।
  
  তরমুজঃ
  
    তরমুজ আমরা সকলেই পছন্দ করি। কিন্তু তরমুজ খাওয়ার পাশাপাশি রূপচর্চার
    ক্ষেত্রেও তরমুজের ব্যবহার রয়েছে। পরিমাণ মতো তরমুজের পাল্প বের করে ঘামাচির
    স্থানে লাগিয়ে ভালোভাবে মালিশ করুন। ঘামাচি দূর করতে তরমুজের
    ব্যবহার ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি।
  
  আদাঃ
  
    ঘামাচি দূর করার জন্য আদা অনেক উপকারী। এক্ষেত্রে আদা পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে
    নেন। এরপর আদা ফোটানো পানি ঠান্ডা করে পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে ঘামাচি
    আক্রান্ত স্থানগুলোতে লাগান। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহারের ফলে ঘামাচি দূর
    হবে।
  
  কাঁচা আমঃ
  
    ঘামাচি দূর করার ক্ষেত্রে কাঁচা আমের ব্যবহার কম হলেও বেশ কার্যকরী। গ্রীষ্মের
    সময় সব জায়গাতেই আম পাওয়া যায়। এজন্য দুইটি আম পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এরপর
    এ আম থেকে রস বের করে ঠান্ডা পানিতে পরিমাণ মতো লবণ ও চিনি মিশিয়ে জুস বানিয়ে
    নিন।
এবং পান করুন। প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দুইবার এইভাবে আমের জুস পান করুন।
    এক সপ্তার মধ্যে ঘামাচির যন্ত্রণা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন।
  
  
    ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে কাঁচা আমের ব্যবহার সহজ এবং
    কার্যকরী। গ্রীষ্মে ঘামাচির যন্ত্রণায় অনেকেই অস্থির হয়ে পড়েন। ঘামাচির
    যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের আশেপাশেই রয়েছে। শুধুমাত্র জানার
    অভাবে আমরা ঘামাচির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় না। আজকে আপনাদের
    সাথে ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো শেয়ার করলাম। আশা
    করি ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জানার পরে আপনারা সহজেই ঘামাচি
    থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
  

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url