শিক্ষা গবেষণার ধাপ - গবেষণা প্রতিবেদন লিখন কাঠামো

বি এড এ অধ্যয়নরত প্রশিক্ষনার্থীদের শিক্ষায় গবেষণা বিষয়টি অধ্যায়নকালে দ্বিতীয় সেমিস্টারে একটি নির্ধারিত বিষয়ের উপর গবেষণা প্রতিবেদন লিখতে হয়। বিএড এর কোর্সকালীন বিষয়গুলোর অ্যাসাইনমেন্টের মধ্যে এটি অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত গবেষণার বিষয় সংশ্লিষ্ট কলেজের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকরা নির্ধারণ করে দিয়ে থাকেন এবং এই নির্ধারিত বিষয়ের উপর গবেষণা প্রতিবেদন লিখতে হয়।

শিক্ষা গবেষণার ধাপ - গবেষণা প্রতিবেদন লিখন কাঠামো

আজকে এই আর্টিকেলে আমরা গবেষণা প্রতিবেদন এর লিখন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করব। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি কলেজে যারা বি এড কোর্স করছেন তাদের জন্য এ আর্টিকেলটি অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে আশা করি।

গবেষণার নামকরণ

গবেষণার শুরুতেই থাকে গবেষণার নামকরণ। তাই গবেষণা প্রতিবেদন লেখার সময় শুরুতে প্রথম পাতাতেই গবেষণার নাম স্পষ্ট অক্ষরে লিখুন। গবেষণার শিরোনাম ছোট বা বড় যাই হোক না কেন উক্ত পাতাটি শুধু শিরোনামের জন্যই ব্যবহার করুন।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

গবেষণা প্রতিবেদনের এই পর্যায়ে কলেজের অধ্যক্ষ থেকে শুরু করে সহ প্রশিক্ষনার্থী পর্যন্ত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হয়। তবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে পদমর্যাদা অনুযায়ী অধ্যক্ষ সবার আগে থাকে। এভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

সারসংক্ষেপ

সারসংক্ষেপ হলো একটি গবেষণার সারাংশ। গবেষণা প্রতিবেদন এর এই অংশে পুরো গবেষণার মূল কিছু প্রতিপাদ্য তুলে ধরে সংক্ষেপে বর্ণনা করার চেষ্টা করুন। সারসংক্ষেপ বা সারাংশ লেখার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। তার মধ্যে গবেষণার বিষয়, গবেষণার উদ্দেশ্য, গবেষণার ক্ষেত্র, পর্যায় ইত্যাদি। এই অংশটিকে ঠিক এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন যাতে একজন পাঠক এই অংশটুকু পড়েই আপনার গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।

সূচিপত্র

সূচিপত্র হলেো যেকোনো একটি লেখার এমন একটি স্থান যেখানে পুরো লেখার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা থাকে। তাই এই সূচিপত্র অংশে প্রতিটি বর্ণনার কিওয়ার্ডগুলো পরপর সাজিয়ে লিখুন। সূচিপত্রের কিবোর্ড গুলো এক পাতার ভিতরে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করুন।

ভূমিকা

ভূমিকা হল যে কোন লেখার একটি মানদন্ড স্বরূপ। গবেষণা প্রতিবেদনের এই অংশে গবেষণার মূল বিষয়বস্তুকে ফোকাস করে কিছু আকর্ষণীয় শব্দ ব্যবহার করে প্রেক্ষাপটটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। যাতে ভূমিকা থেকে গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করা যায়।

সমস্যার প্রকৃতি

গবেষণা প্রতিবেদনের এই পর্যায়ে আপনার নির্বাচিত সমস্যাটির প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করুন। আপনি আসলে কি ধরনের সমস্যা নিয়ে গবেষণা করছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করুন।

সমস্যার বর্ণনা

আপনার নির্বাচিত গবেষণার বিষয়বস্তু অর্থাৎ সমস্যাটির বর্ণনা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। নিম্নে একটি উদাহরণ দেয়া হলোঃ
'মানব মনে যেসব বহুমুখী প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে তার যথাযথ উত্তর লাভের আকাঙ্ক্ষায় গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অবলম্বনে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে লব্ধ তথ্য সমূহকে যাচাই বাছাই করে নতুন জ্ঞান আহরণ করা ও প্রচলিত জ্ঞানের উন্নতি সাধনই গবেষণার কাজ। পরিকল্পিত ও ধারাবাহিকভাবে তথ্য সংগ্রহপূর্বক সেই তথ্যের বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যার মাধ্যমে কোন সমস্যার নির্ভরযোগ্য সমাধান খুঁজে পাওয়া, শিক্ষাক্রম শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রণয়ন ও ব্যবহার, পাঠ্যপুস্তক এর বিভিন্ন দিক, শিখন-শেখানো পদ্ধত, শিক্ষামূল্যায়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমূহের অসংগতি ও দুর্বলতার দিক অবলম্বনে শিক্ষা গবেষণার কাজ পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা আজকের দ্রুত উন্নয়নশীল বিশ্বে অনস্বীকার্য।'

গবেষণার উদ্দেশ্য

প্রতিটি গবেষণার কিছু উদ্দেশ্য আছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন জ্ঞান তত্ত্ব ও সূত্র সৃষ্টি করা।
  • সমসাময়িক শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে আলোকপাত করা।
  • শিক্ষা সংক্রান্ত আচরণীয় বিজ্ঞান এর উন্নয়ন করা।
  • অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানের শিক্ষামূলক সমস্যা সমূহ সমাধান করা।
  • জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর পন্থা উদ্ভাবন করা।
  • শিক্ষার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ধারণা প্রস্তুত করা।
  • শিক্ষকের শিখন-শেখানো মান উন্নয়নে সাহায্য করা।
  • শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রচলিত সূত্র, তত্ত্ব জ্ঞানকে পূনঃমূল্যায়ন করা।
  • শিক্ষা সম্পর্কিত পরিস্থিতি ও সমস্যাসমূহ আলোচনা করা।
  • জাতীয় শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম ও শিক্ষা পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা।
  • বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন করা।
  • বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষার উপর ঐতিহাসিক, সামাজিক, দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক যে প্রভাব রয়েছে, তা বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে শিক্ষার সঠিক তত্ত্বের উদ্ভাবন করা।

ব্যবহৃত পদসমূহের সংজ্ঞা

অন্যান্য যে কোন প্রচলিত ও জনপ্রিয় বিষয়ভিত্তিক ক্ষেত্রে শিক্ষা গবেষণাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- মৌলিক গবেষণা ও ফলিত গবেষণা। মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে তত্ত্ব উদ্ভাবন, প্রসার ও বিস্তরণ ঘটানো সম্ভব। মৌলিক গবেষণা অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে কোন নতুন সত্তা উদঘাটনের লক্ষ্যে পরিচালনা করা হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণার চেয়ে ফলিত গবেষণাই বেশি প্রচলিত। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশসমূহের মূলত নিজস্ব সমস্যা ভিত্তিক ফলিত গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মৌলিক ও ফলিত গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষা গবেষণাকে আরো বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়।

ঐতিহাসিক গবেষণা

ঐতিহাসিক গবেষণা হলো সাম্প্রতিক অতীতকালের কিংবা দূরবর্তী অতীতকালের কোন ঘটনার বিশ্লেষণমূলক অধ্যায়ন। এটা এক প্রকার গুণগত গবেষণা যেখানে গবেষক অতীতের কোন ঘটনা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উপসংহারে উপনীত হন।

বর্ণনামূলক গবেষণা

বর্ণনামূলক গবেষণা বলতে এমন গবেষণাকে বোঝায় যা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি পরিস্থিতি বা গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে সঠিক চিত্র প্রদান করে। এটাকে পরিসংখ্যানিক গবেষণাও বলা হয়।

পরীক্ষামূলক গবেষণা

পরীক্ষামূলক গবেষণা মূলত কার্যকারণ অনুসন্ধান এবং একাধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই গবেষণার কোন ঘটনা বা বিষয়ের কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কগুলো পরীক্ষা করে।

পরিমাপ বাচক গবেষণা

গুণবাচক গবেষণা কোন বিষয়ের ধরন এবং মান নিয়ে আলোচনা করে এবং কোন ঘটনাকে এমনভাবে তুলে ধরে যেন সহজ বোধগম্য হয়।

মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা

যে গবেষণায় একই সাথে গুণবাচক এবং পরিমাপবাচক গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করা হয় তাকে মিশ্র পদ্ধতির গবেষণা বলা হয়।

জরিপ গবেষণা

জরিপ গবেষণা সাধারণত বর্তমানে বিদ্যমান সমাজের কোন সমস্যা নিয়ে করা হয়।

কেস স্টাডি

কেস স্টাডি গবেষণার মূল লক্ষ্য হলো ঘটনার অত্যন্ত গভীরে প্রবেশ করে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি বিশেষ এককের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে বাস্তবধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা।

কর্ম সহায়ক গবেষণা

শিক্ষা গবেষণা কার্যক্রমে কর্মসহায়ক গবেষণা একটি নতুন বৈজ্ঞানিক ও প্রয়োগ পদ্ধতি। এই গবেষণা পদ্ধতি বাস্তব জগতের প্রয়োজন ও সমস্যা নিয়ে গবেষণা করে।

সামাজিক গবেষণা

সামাজিক গবেষণা বলতে সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণাকে বোঝানো হয়। সামাজিক বিজ্ঞান সমূহের বিষয়বস্তু, মানুষ, মানুষের মন, মানুষের সমাজ, মানুষের সংস্কৃতি, মানুষের অর্থনীতি, মানুষের রাজনীতি প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সাহিত্য পর্যালোচনা

যেকোনো গবেষণা শুরু হয় সাহিত্য পর্যালোচনা দ্বারা। গবেষণা নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যেই মূলত গবেষণায় সাহিত্য পর্যালোচনা করা হয়। গবেষণার বিষয় নির্ধারণের পর সাহিত্য পর্যালোচনার জন্য সমাধান গবেষণা কর্মকে সহায়তা করবে।
  • কাঙ্ক্ষিত গবেষণাটি আসলেই করা সম্ভব কিনা?
  • সমস্যাটি কি মৌলিক নাকি পুনরাবৃত্তিমূলক?
  • এ বিষয়ে কি কি গবেষণা করা হয়েছে? পূর্ববর্তী গবেষণার কি কি কাজ রিভিউ করতে হবে?
  • এ গবেষণায় কি কি ফলাফল বের হয়েছে? এ ফলাফল কি যৌক্তিক? ফলাফল কি ধরনের গুরুত্ব বহন করে?
  • এসব গবেষণাতে গুরুত্বপূর্ণ কি কি তথ্য বাদ পড়েছে?
  • এ সমস্যার সমাধানের জন্য পূর্ববর্তী গবেষণা থেকে কি কি তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া যাবে?
  • পূর্ববর্তী গবেষণার সুপারিশে ভবিষ্যতে কি কি ধরনের গবেষণার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে?

গবেষণা নকশা

যে কোন গবেষণার ক্ষেত্রে নকশা প্রণয়নের সময় থেকে নৈতিকভাবে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হয়। গবেষণার নৈতিকতা সংক্রান্ত বিবেচনা করে গবেষকের উচিত হবে তার গবেষণা পরিচালনা করা। কোন কারণে নৈতিকতা মানা সম্ভব না হলে গবেষণা কৌশল বা পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনে গবেষক তার গবেষণার পরিকল্পনা করবেন। গবেষণা ক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য গবেষণার নমুনা ও বা অংশগ্রহণকারীদের উপর গবেষক কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করতে পারেন না। গবেষককে মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা অধিকার রয়েছে গবেষণায় অংশগ্রহণ করার বা তা প্রত্যাখ্যান করার।

প্রত্যেক মানুষেরই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রয়েছে গবেষণায় অংশগ্রহণ করার কিংবা তা প্রত্যাখ্যান করার। মানুষের ব্যক্তিগত অধিকারকে গবেষককে সম্মান দিতে হবে। গবেষণার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের অনুমতি লাভ খুব সহজ ব্যাপার নয়। এমনকি তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। এমনকি তাদের সব ধরনের তথ্য গোপন রাখা হবে এ ব্যাপারে তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি

নমুনায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। কোন গবেষক কোন পদ্ধতিতে নমুনা দল বাছাই করবেন তা নির্ভর করে ওই গবেষণার উদ্দেশ্য প্রকৃতি সময় ও বরাদ্দকৃত অর্থের উপর। সম্ভাবনা তত্ত্বের ভিত্তিতে নমুনায়নের এ পদ্ধতি প্রধানত দুই প্রকার। যথাঃ
  • সম্ভাবনা নমুনায়ন
  • নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন

সম্ভাবনা নমুনায়ন

সম্ভাবনা নমুনায়নকে প্রয়োগ ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ
  • দৈবচয়িত নমুনায়ন 
  • নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন 
  • স্তরীভূত নমুনায়ন।
  • বহুমাত্রিক নমুনায়

নিঃসম্ভবনা নমুনায়ন

যে নমুনায়নের সমগ্রকএর প্রতিটি এককের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে না তাকে নি সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে। নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন দুই ধরনের হতে পারে। যথাঃ
  • উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন
  • আকস্মিক নমুনায়ন

উদ্দেশ্য মূলক নমুনায়ন

সম্ভাবনা তত্ত্বকে ব্যবহার না করে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন করা হয়। গবেষক উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, পছন্দ ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে যে পদ্ধতিতে নমুনা বাছাই করেন তাকে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন বলে।

ধরা যাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্র/ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এ থেকে সকলের মাসিক ব্যয় জানা সম্ভব নয়। গবেষকের ইচ্ছে হলো ১০০ জন ছাত্র/ছাত্রীকে নমুনা হিসেবে চিহ্নিত করবেন। ১০০ জনকে নির্বাচিত করলেন এবং তাদের কাছ থেকে মাসিক ব্যয়ের তালিকা নিয়ে তথ্য যাচাই বাছাই করলেন। এখানে গবেষক নমুনা দল গঠনে উদ্দেশ্য মূলক নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।

আকস্মিক নমুনায়ন

গবেষক অনেক সময় নমুনায়নের বিশেষ কোন পদ্ধতিকে অনুসরণ না করে তার নিজের সুবিধা অনুযায়ী ইচ্ছামত এবং যা কাছে পাওয়া যায় সেগুলোকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এটি প্রতিনিধিত্বমূলক বা বিজ্ঞানসম্মত না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ উপযোগী বলে প্রমাণিত।

আকস্মিক নমুনায়ন এক ধরনের নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন পদ্ধতি, যেখানে নমুনা এককের সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায় বা নাগাল পাওয়া যায় বা ব্যবস্থাপনা করা সহজ হয়। এসব বিবেচনা করে নমুনা বাছাই করা হয়। বিদ্যালয়ের যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সহশিক্ষাক্রমিক কার্যাবলী সম্পর্কে মনোভাব যাচাইয়ের জন্য নিজের সুবিধা মত এবং যাকে কাছে পাওয়া যায় তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলো আকস্মিক নমুনায়ন পদ্ধতি।

উদাহরণস্বরূপ, সুনাগরিক তৈরিতে স্কাউট এর ভূমিকা বিষয়ে কোনো বিদ্যালয়ের ১ হাজার জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থীর মনোভাব জানতে যে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বা নিজের সুবিধা মত যে কাউকে উত্তর করার জন্য জিজ্ঞাসা করা আকস্মিক নমুনায়ন পদ্ধতি উদাহরণ হতে পারে।

তথ্য সংগ্রহের কৌশল

নিয়মতান্ত্রিক ধাপ ও কৌশল ব্যবহার করে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। একটি গবেষণার সমস্যা চিহ্নিত করে অনুমিত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। গবেষকও তথ্য সংগ্রহের কি কি কৌশল অনুসরণ করবেন, তা নির্ভর করে গৃহীত সমস্যার ধরন প্রকৃতি উদ্দেশ্য ও নমুনায়নের উপর।

প্রশ্নমালা

উপাত্ত সংগ্রহের বিভিন্ন কৌশল আছে। তন্মধ্যে উপাত্য ও তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বহুল ব্যবহৃত কৌশল হচ্ছে প্রশ্নমালা। প্রশ্নমালার ধরন দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রমাণ করা হয়।
  • উত্তরের ধরন
  • প্রশ্নমালার বিতরণ পদ্ধতি
উত্তরের ধরনের অপর ভিত্তি করে প্রশ্ন মালাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমনঃ
  • নির্ধারিত উত্তরমূলক প্রশ্নমালা
  • উন্মুক্ত প্রশ্নমালা
  • মিশ্র প্রশ্নমালা

নির্ধারিত উত্তরমূলক প্রশ্নমালা

নির্ধারিত প্রশ্নমালাতে প্রত্যেক প্রশ্নের মানে সম্ভাব্য কিছু উত্তর লিপিবদ্ধ থাকে। উত্তরগুলোর মধ্য থেকে উত্তরদাতার বিবেচনায় প্রশ্ন অনুযায়ী যে উত্তরটি সবথেকে বেশি প্রযোজ্য সেটিতে টিক চিহ্ন দেয়ার নির্দেশনা থাকে। এ ধরনের প্রশ্নমালা সর্বক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না।

উন্মুক্ত প্রশ্নমালা

উন্মুক্ত প্রশ্নমালায় প্রশ্নের শেষে কোন প্রকার উত্তর দেওয়া থাকে না। উত্তরদাতার উত্তর কতটুকু হবে তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না। তবে প্রত্যেক প্রশ্নের শেষে উত্তর দেওয়ার জন্য কিছু জায়গা নির্ধারিত থাকে যা উত্তরদাতা কর্তৃক পূরণীয়।

মিশ্র প্রশ্নমালা

এ ধরনের প্রশ্নমালায় তথ্য সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত উন্মুক্ত প্রশ্নমালা ব্যবহার করা হয়।

সাক্ষাৎকার

সাধারণভাবে কোন উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মুখোমুখি অবস্থানে মৌখিক আলাপকে সাক্ষাৎকার বলে। সাক্ষাৎকার কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
  • আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার
  • অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার

আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার

এ ধরনের সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী পূর্ব নির্ধারিত বিশেষ কতগুলো প্রশ্নের উত্তর এর উপর ভিত্তি করে সাক্ষাৎকার পরিচালনা করে। প্রয়োজন অনুসারে তিনি সাক্ষাৎকার প্রদানকারীকে প্রশ্ন ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারেন, প্রশ্নের শব্দ পরিবর্তন করতে পারেন। উত্তরদাতার কাছ থেকে উত্তর সংগৃহীত হয়েছে কিনা তা সহজ ভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।

অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার

এ ধরনের সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী পূর্ব নির্ধারিত কোন প্রশ্নের সাহায্য ছাড়াই গবেষণার উদ্দেশ্য অনুসারে ঘরোয়াভাবে তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। পূর্ব নির্ধারিত প্রশ্নমালার সীমারেখা আবদ্ধ না করার কারণে অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার ব্যাপারে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে থাকেন। সামাজিক গবেষণায় অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার বেশি ব্যবহৃত হয়।

পর্যবেক্ষণ 

সাধারণত ধারাবাহিকভাবে দূর অথবা নিকট থেকে অবলোকন করাকে পর্যবেক্ষণ বলা হয়। শিক্ষা ও সমাজ গবেষণায় পর্যবেক্ষণ বলতে উপাত্ত সংগ্রহের একটি বিশেষ পদ্ধতিতে বোঝায়। এটি তথ্য সংগ্রহের এমন একটি পদ্ধতি যেখানে গবেষক গবেষণার পরিবেশকে কখনো প্রভাবিত করেন না।

ফোকাস দল আলোচনা

সমাজ ও শিক্ষা গবেষণার ক্ষেত্রে ইদানিং কয়েকটি পদ্ধতি অনুশীলন করা হচ্ছে। তন্মধ্যে ফোকাস দল আলোচনা একটি সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, গ্রাম উন্নয়ন এর ক্ষেত্রে ফোকাস দল আলোচনা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

ডকুমেন্ট

প্রাথমিক উৎস থেকে গবেষক সরাসরি মাঠ পর্যায়ে থেকে উপাত্ত ও তথ্য সংগ্রহ করেন। আবার গবেষণার প্রকৃতি অনুযায়ী উপাত্ত দ্বিতীয় পর্যায়ে থেকেও সংগ্রহ করেন।

উপাত্ত উপস্থাপন

আমাদের এই মহাবিশ্বের প্রতিদিনই হাজার রকম ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার কোনোটি দেখা যায়, আবার কোনটি দেখা যায় না। এসব ঘটনা মানুষের পর্যবেক্ষণের আওতায় এলে কোন না কোন ভাবে তা প্রকাশ করতে সমর্থ হয়। তখন তাকে তথ্য বা উপাত্ত বলে।

উপাত্ত বিশ্লেষণ

গবেষকের সংগ্রহকৃত উপাত্তগুলোকে সংক্ষিপ্ত এবং ব্যবহার উপযোগী করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে অগ্রসর মান হওয়ার প্রক্রিয়ায় হল উপাত্ত বিশ্লেষণ। ব্যবহার উপযোগী করার জন্য যে সমস্ত কৌশল বা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় তা তিন ধরনের হতে পারে। যথাঃ
  • বর্ণনামূলক বিশ্লেষণ
  • সিদ্ধান্ত মূলক বিশ্লেষণ
  • কম্পিউটার বিশ্লেষণ

ফলাফল

গবেষক তার গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যা সহ উপস্থাপন করতে পারেন। গবেষক আলোচনার অংশটি পৃথক অংশেও উপস্থাপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি ফলাফল অল্প কথায় ব্যক্ত করবেন, কিন্তু ফলাফলের ব্যাখ্যা আলোচনা অংশে বর্ণনা করবেন। এখানে তিনি সাহিত্য পর্যালোচনার কিছু তথ্য তার ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতার যুক্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। ফলাফল উপস্থাপনের ক্ষেত্রে গবেষক যে বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখবেন তা নিম্নরূপঃ
  • গবেষক শুধুমাত্র ততটুকু ফলাফল উপস্থাপন করবেন যা তার গবেষণায় প্রভাব প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত।
  • কোন মতামত ছাড়া ফলাফলের গ্রাফ বা টেবিল উপস্থাপন পরিহার করতে হবে কারণ ফলাফল থেকে একজন আগ্রহী পাঠক জানতে চান গবেষক কেন তার ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন।
  • পরিমাণগত ফলাফল উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের চার্ট এবং টেবিলের ব্যবহার।
  • গবেষক তার গবেষণা ফলাফলের টেবিল, গ্রাফ বিশ্লেষণের প্রধান প্রধান দিকগুলো উপস্থাপন করবেন।

গবেষণার সুপারিশ

গবেষণার এই অংশে ফলাফলের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের তুলনা এবং এদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। এ অংশে প্রাপ্ত ফলাফলের তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক দিক ও আলোচনা করা হয়। অর্থাৎ ফলাফল কোন প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে সমর্থন করছে কিনা বা নতুন কোন তত্ত্বের জন্ম দিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে আলোচনা করে। উক্ত গবেষণার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি হিসেবে আমরা মিশ্র প্রশ্নমালা পদ্ধতি প্রয়োগ করেছি। কারণ এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমরা উল্লেখিত দিকগুলোর সুবিধা পেয়ে থাকি।
  • নির্ধারিত উত্তরমূলক প্রশ্নমালা যেখানে তথ্য সংগ্রহে অক্ষম সেখানে উন্মুক্ত প্রশ্নমালা ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
  • মিশ্র প্রশ্নমালা পদ্ধতিতে উত্তরদাতাগন উত্তরদানের ক্ষেত্রে অবাক স্বাধীনতা ভোগ করেন।
  • এই ধরনের প্রশ্নমালা থেকে সংগৃহীত তথ্যসমূহের সাহায্যে অতি সহজেই সারণি প্রস্তুত করা সম্ভব।
  • এক্ষেত্রে উত্তরদানের জন্য উত্তরদাতাকে বেশি কিছু লিখতে হয় না।
  • ডাকযোগে প্রেরিত প্রশ্নমালা যদি নির্ধারিত উত্তরমূলক প্রশ্নমালা হয়, তবে উত্তরদানকারীর পক্ষ থেকে পূরণকৃত প্রশ্নমালা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • এ পদ্ধতিতে উত্তরদাতাকে অতি সহজে সংকেত দ্বারা চিহ্নিতকরণ সম্ভব হয়।

উপসংহার

মানব জীবনের উন্নয়নে গবেষণার আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। শিক্ষায় জাতির উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি। কাজেই শিক্ষা তথা উন্নতর বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া কোন জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। দেশ ও জাতির দ্রুত উন্নয়নের জন্য মৌলিক গবেষণা পরিহার্য। তাই বিশ্বের সচেতন দেশসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বাণিজ্য, অর্থনীতি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মহাকাশ ইত্যাদি সেক্টরে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। তাই জাতির উন্নয়নের জন্য "নতুন শিক্ষাক্রম (জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১) অনুসরণ করে সিমুলেশন ক্লাস পরিচালনার প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা" করা জরুরী।

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

  • রহমান আলী সিদ্দিকী, সামাজিক গবেষণা পদ্ধতিঃ তত্ত্ব ও প্রয়োগ, বাংলা একাডেমি, ঢাকা।
  • জিনাত জামান (১৯৮৭) শিক্ষা গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল (প্রথম প্রকাশ), শিল্পতরু, ঢাকা।
  • ড. আশরাফ আলী (১৯৮৮), শিক্ষা গবেষণা পরিচিতি (দ্বিতীয় সংস্করণ), ঢাকা, বাংলাদেশ।
  • ড. ডি. এম ফিরোজ শাহ (২০১৭) শিক্ষায় গবেষণা, মিতা ট্রেডার্স, ঢাকা।
  • চৌধুরী আব্দুল হান্নান (১৯৯২) পরিসংখ্যানের মূলতত্ত্ব , প্রবাহ প্রকাশনী, ঢাকা।
  • প্রফেসর ড. মনিরা জাহান (২০১৮) শিক্ষায় গবেষণা, টিকিউআই, ঢাকা।

পরিশিষ্ট (প্রশ্নমালা)

  • মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার সমর্থন করেন কি? 
  • গাড়ির ড্রাইভিং এর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কেন উচিত নয়?
  • কম্পিউটারের ব্যবহার বিদ্যালয়ে হাতে-কলমে করা উচিত কি?
  • ইন্টারনেট ব্যবহার করে শ্রেণীতে পাঠদান করলে ভালো হয় কি?
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে কি?

সমর্থিত উত্তরে টিক চিহ্ন দিন।     হ্যাঁ     না
উত্তর না হলে কেন করেন না? লিখুন
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url