বই পড়ার ভালো দিক

বইকে বলা হয় জ্ঞানের সাগর। বই পড়ার সবচাইতে ভালো দিক হল, বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিনোদনের অন্যতম ভালো মাধ্যম হলো বই পড়া। তবে জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়ার কিংবা বিনোদন পাওয়া এগুলো ছাড়াও বই পড়ার আরো অনেক ভালো দিক এবং উপকারিতা রয়েছে যেগুলো আমরা সচরাচর শুনতে পায় না।
বই পড়ার ভালো দিক
আজকে আমরা বই পড়ার উপকারিতা এবং বই পড়ার ভালো দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। আপনার যদি বই পড়তে ভালো না লাগে বা বই পড়া অপছন্দ হয়ে থাকে তাহলে একথা নিশ্চিত যে আপনি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সূচিপত্রঃ- বই পড়ার ভালো দিক


বই পড়া অনেকের কাছে মনে হতে পারে সময় নষ্ট করা কিংবা কারো কাছে এটি বিরক্তিকর মনে হতে পারে। এ সকল কারণে অনেকেই বই পড়া থেকে দূরে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে বই পড়লে সময় নষ্ট হয় না। যেকোনো ধরনের বই পড়লে কিছু না কিছু নতুন তথ্য জানা সম্ভব হয়। বই পড়ে অনেক কিছু শেখা সম্ভব হয়। বই পড়ার মাধ্যমে একজন পাঠক যে শুধু জ্ঞানলাভ করে কিংবা আনন্দ পেয়ে থাকে তাই নয়, বই পড়ার আরো অনেক ভালো দিক এবং উপকারিতা রয়েছে।
অ্যালযাইমার টাইপ অফ ডিমেনশিয়া নামে এক ধরনের রোগ রয়েছে। এই রোগের ফলে একজন মানুষ স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু বই পড়ার অভ্যাস থাকলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। অ্যালজাইমার স্টাইল অফ ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে সবকিছু ভুলে যেতে থাকেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে সেই রোগী নিজেদের মানুষ কিংবা কাছের মানুষদেরকে চিনতে সমস্যা হয়ে থাকে।

বই পড়ার ভালো দিক  গুলো

একজন মানুষ তার জীবনে অর্জিত জ্ঞান, আনন্দ এবং দুঃখ কে খুব সহজেই একটি বইয়ের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখে যেতে পারেন। বিশ্বের মহামূল্যবান গ্রন্থগুলো মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য সাধনার নির্বাক সাক্ষী। চিরন্তন সত্য কথা যে, টিভি/সিনেমা দেখা কিংবা রেডিও শোনা অথবা মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটারে কোন কিছু দেখা বা শোনাচে বই পড়লে আপনার ব্রেনের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।

একাধারে অনেকক্ষণ ধরে টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলের পর্দায় তাকিয়ে থাকার ফলে আপনার ব্রেনের কোষ এবং চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অপরপক্ষে, বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনা এবং কল্পনার জন্ম হয়, এই বই পড়া আপনার মস্তিষ্কের ব্যায়াম হিসেবে কাজ করে। যার ফলে ব্রেইন শক্তিশালী এবং কার্যকর হয়। আপনি যদি নিয়মিত বই পড়েন তাহলে আপনার মধ্যে নতুন নতুন চিন্তার জন্ম হবে, এবং ভাবনা ও বিবেচনার পথ উন্মোচিত হবে।

 (১) বই মানুষের মনের কৌতূহল মেটায়

মানুষের মনের কৌতুহল মেটানোর জন্য বই একটি উত্তম মাধ্যম। রহস্যময় এই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অনেক বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে। সকল অজানা বিষয় সম্পর্কে আমাদের অবহিত করতে পারে একমাত্র বই। বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ মুহূর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করতে পারে।

(২) বই নিঃসঙ্গের সঙ্গী

আপনার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হতে পারে বই। আপনি যদি নির্জন অরণ্য কিংবা জন মানবহীন কোন দ্বীপে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে থাকেন তাহলে আপনার নিঃসঙ্গতা দূর করতে সাহায্য করবে বই। আপনার কাছে বই থাকলে খুব সহজে আপনার মনের সকল বেদনা, দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতিভূষণ, শেকসপিয়র, গ্যেটে, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, দস্তয়ভস্কি কিংবা গোর্কির লেখা বই যদি সাথে থাকে, তবে মানুষের হৃদয় মনের অনেক অভাব ঘুচে যায়।

(৩) বই পড়া আপনাকে বিচক্ষণ করে তুলে

আপনি যদি নিজেকে বিচক্ষণ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। এছাড়াও নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বইয়ের বিকল্প নেই। আপনি আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবন। আপনি যত বই পড়বেন ততই আপনার জ্ঞানের পরিধি বাড়বে এবং আপনার বুদ্ধি ধারালো হবে।
আপনি যে বিষয়গুলো জানতে চান সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সঠিক এবং ভালো ধারণা নিতে পারবেন এবং অন্যের কাছে সেগুলো ব্যাখ্যা করতে পারবেন। যে কোন বিষয়ে অন্যকে বোঝানোর আগে সেই বিষয় সম্পর্কে নিজের যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হয়। আপনার যদি সে সকল বিষয় সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থেকে থাকে তাহলে অন্যকে বোঝানোর কাজটি আপনি খুব সহজেই করতে পারবেন। আর এই কাজটি করার জন্য বইয়ের কোন বিকল্প নেই।

(৪) বই আনন্দের উৎস

বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা, ঘাট প্রতিঘাত এর ফলে মানুষ অনেক সময় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং চরম হতাশায় ভুগে থাকেন। খুব সহজে আপনি বই পড়ার মাধ্যমে আপনার হতাশাগুলোকে দূর করতে পারেন। একটি উৎকৃষ্ট এবং ভালো মানের বই আপনাকে এনে দিতে পারে অনাবিল আনন্দ। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ত জীবনের ব্যস্ততা, ক্লান্তি এবং বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত জীবনের দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে এটি ভালো মানের বই। দুঃখ কষ্টের মুহূর্তে, মানসিক অশান্তি এবং দুর্বলতার মধ্যে আপনার মনে শান্তি এবং প্রেরণা দিতে পারে বই।

(৫) সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায় বই

শাড়ি পড়ার ভালো দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ। যে কোন সভ্যতা এবং সংস্কৃতির বিকাশ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে ঘটানো সম্ভব। অতীত বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে যোগসাজস্য কিংবা সেতুবন্ধন করতে পারে একমাত্র বই। বই থেকে গৃহীত জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ এগিয়ে যায় সামনের পথে, আগামীর পথে কিম্বা আগামী অগ্রযাত্রায়। জ্ঞান বিজ্ঞানের আবিষ্কার হয়েছে মানুষের প্রয়োজনের ফলে। এবং এই মহাবিশ্বের বিভিন্ন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে আমরাও পেয়েছি জীবনের বিভিন্ন দর্শন গুলোকে।

আর এই সকল কিছুর ধারক ও বাহক হলো বই। যে সকল মহা পন্ডিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে আমরা এ সকল জিনিস পেয়েছি তারা বর্তমানে আমাদের মাঝে নেই। বর্তমানে হোমার, ভার্জিল, দান্তে, গ্যেটে, শেক্সপিয়র, দস্তয়ভস্কি আর রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাত পাওয়া সম্ভব নয়। কোথায় পাওয়া যাবে মাদাম কুরি, মার্কনি, টমাস আলভা এডিসন, জগদীশচন্দ্র বসুকে? এছাড়াও ২১ শতকে প্লেটো, অ্যারিস্টটল আর কার্ল মার্কসকে প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া অসম্ভব।
এটা নিশ্চিত যে এ সকল মহা পন্ডিত এবং জ্ঞানীদের সাক্ষাৎ আর কোনদিন সম্ভব হবে না কিন্তু একটি বই, একটি গ্রন্থাগারের মাধ্যমে খুব সহজেই তাদের সান্নিধ্য পাওয়া যেতে পারে। অনুভব করা যেতে পারে তাদের নিঃশব্দ উপস্থিতি। একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে সকল বিখ্যাত মনীষীদের চিন্তাভাবনার সাথে পরিচিত হয়ে জ্ঞান, আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে।

(৬) মানুষকে উদার করেতে সাহায্য করে বই

একজন মানুষের মনের বিচিত্র সব অনুভূতি, এবং ভাব আবেগকে উপলব্ধি করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বই। বই একজন মানুষকে ত্যাগী, বীর, সত্যের জন্য আত্ম প্রদানকারী, উদার, মানবপ্রেমী এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পর্কে শেখায়। পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ তার মনের দিগন্ত উন্মোচিত এবং প্রসারিত হয়ে থাকে। এছাড়াও মানুষ এবং সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে সাহায্য করে বই।

(৭) বই শব্দভান্ডার বাড়াতে সাহায্য করে

আপনি যদি নিজের শব্দভাণ্ডার বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হবেন এবং সেগুলো বাস্তব জীবনে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিদিন বই পড়ার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হতে পারি এবং অজানা শব্দগুলোকে জানতে এবং বুঝতে পারি। শব্দভাণ্ডার বাঁড়ার সাথে সাথে সে শব্দগুলো আমরা কথাবাত্রায় প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের কথা বলার ধরনকে অনেক সুন্দর করতে পারি।

(৮) আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বই

বই পড়ার অন্য একটি ভালো দিক হলো বই পড়লে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার লক্ষ্য পূরণের জন্য আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। যে কোন কাজকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে আপনি বিভিন্ন ব্যক্তির জীবন কাহিনী করতে পারেন। যার ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে। 


আপনি যদি একজন সফল মানুষের জীবন কাহিনী পড়েন যে কিনা তার জীবনে অনেক বাধা, কষ্ট এবং দুঃখকে অতিক্রম করে তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে, তখন আপনার মনের মধ্যেও এক অন্যরকম উদ্দীপনা সৃষ্টি হবে। আপনার বর্তমান পরিস্থিতি যতটাই খারাপ বা কষ্টের হোক না কেন আপনি আপনার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আরো কঠোর পরিশ্রম করবেন এবং আত্মবিশ্বাসী থাকবেন। এক কথায় ওই ব্যক্তির জীবনে আপনার জীবনের মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

এরকম অনেক মানুষ আছেন যারা অনেক বড় কিছু করতে চান। কিন্তু ব্যর্থতার ভয়ে তারা সেই জিনিসটা শুরু করতে পারেনা। এক্ষেত্রে যেকোনো সফল একজন ব্যক্তির জীবনী কিংবা মোটিভেশনাল বই আপনার মনের ব্যর্থতার ভয়কে দূর করতে সাহায্য করবে। পিটার থেইল এর “জিরো টু ওয়ান”, নেপোলিয়ান হিল এর “থিংক এ্যান্ড গ্রো রিচ” – এই ধরনের বইগুলো অনেকেরই জীবন বদলে দিয়েছে। তাদের মনে যেমন জন্ম নিয়েছিল সাহস এবং বিশ্বাস আপনার মধ্যেও হতাশা এবং সংখ্যা গুরগত হয়ে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস জন্ম নিবে।

আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে জীবন থেকে মানসিক চাপ, হতাশা, দুঃখ এবং বিভিন্ন ধরনের বাধাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে একটি ভালো বই। কোন ব্যক্তির জীবনে কিংবা এ ধরনের যেকোনো ভালো মানের বই আপনার মনের ভালো অনুভূতি সৃষ্টি করবে এবং আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।

(৯) মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়

বই পড়া আপনার স্মরণ শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বই পড়ার মাধ্যমে আপনার স্মৃতিশক্তি স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত বই পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত লাভ করেন এবং সেগুলো খুব সহজে মস্তিষ্কে স্থায়ী থাকে।  তাই প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মনে রাখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

(১০) ভাষার দক্ষতা বাড়ায়

শুধুমাত্র অনুপ্রেরণা পেতে কিংবা জ্ঞান বৃদ্ধি করতে বই পড়া জরুরি-ব্যাপারটি শুধু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আপনার কথা বলায় ভাষার মাধুর্য বৃদ্ধি করতে, ভাষার দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলার জন্য অবশ্যই বই পড়তে হবে। স্বাভাবিকভাবে যিনি বেশি বই পড়েন তার শব্দভাণ্ডার অন্যান্য মানুষের তুলনায় অনেক বেশি এবং সমৃদ্ধ। এছাড়াও তিনি তার জানা যে কোন বিষয় অন্যদের নিকট স্বতঃস্ফূর্ত এবং গোছালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।

আপনি যে কোন সাধারণ কথা, কিংবা নেগেটিভ কথাকেও পজিটিভ ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সমাজে আপনার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ অনেক বৃদ্ধি পাবে। বইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন লেখকরা বিভিন্ন স্টাইল বা ধরনের তাদের ভাবনা, চিন্তাধারা ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকেন। একটি ভাষা কতটা সমৃদ্ধ এবং বিশাল, কতটা বৈচিত্র পূর্ণ তা জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই পড়ার মাধ্যমে ভাষার বৈচিত্র্য, শব্দ ভান্ডারের সাথে পরিচিত হওয়ার সাথে সাথে সেই বৈচিত্র্য গুলো আপনার মাঝেও প্রকাশ পাবে।

নিয়মিত বই পড়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ভাষার ধরন বুঝতে এবং শিখতে পারবেন। মনে করেন আপনি ইংরেজি ভাষা শিখতে চাচ্ছেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন মুখস্ত করার পাশাপাশি আপনি যদি ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন বই যেমন-গল্প, উপন্যাস, কবিতা অথবা অন্য যেকোনো ভালো মানের বই পড়া শুরু করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইংরেজি শেখার পাশাপাশি ইংরেজি শব্দভাণ্ডার এবং ইংরেজি ভাষার ধরন আয়ত্ত করা সহজ হবে।

(১১) বই মানসিক চাপ কমায়

মানসিক চাপ কমানোর সহজ একটি মাধ্যম হলো বই পড়া। ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে আপনি যেরকম মানসিক চাপের মধ্যে থাকুন না কেন আপনি যদি একটি ভালো মানের বই পড়েন তাহলে আপনার মনের সে চাপ দূর হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে যখন আপনি একটি বই পড়তে পড়তে সেই বইয়ের ভেতরে সম্পূর্ণ ঢুকে যাবেন তখন আপনার অবচেতন মন সেই জগতকেই বাস্তব বলে ভাবা শুরু করবে।

সেই সাথে আপনি পার্থিব জীবনে ব্যস্ততা এবং মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে পারবেন। যখন আপনি একটি ভালো মানের বই পড়তে পড়তে আপনার কল্পনার জগতে প্রবেশ করবেন তখন আপনার মন ও সে অনুযায়ী কাজ করবে। এক মনস্তাত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে – মানুষ যখন কোনও ভাল বই পড়ে তখন মাংসপেশী অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়, সেইসাথে হার্টবিটও অনেক বেশি স্বাভাবিক থাকে।  এরফলে টেনশনও অনেক কম অনুভূত হয়।

(১২) সফল ও জ্ঞানীদের কাছ থেকে সহজে জ্ঞান নিতে পারবেন

একটি বই হল একজন লেখক এর জীবনে অর্জিত জ্ঞান, গবেষণা এবং তার চিন্তার ফসল। একজন লেখক যিনি অনেক বছর ধরে গবেষণা এবং চিন্তার ফলে তার সকল অর্জিত জ্ঞান একটি বইয়ের লিপিবদ্ধ করেছেন সেই বইটি পড়ার মাধ্যমে হয়তো আপনি কয়েক ঘন্টা, কয়েক দিন কিংবা কয়েক মাসের মধ্যে সেই জ্ঞানের সাথে পরিচিত হতে পারেন এবং সেই জ্ঞানে নিজেও জ্ঞানী হতে পারেন। একটি বইয়ের একটি লাইন একজন মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।

যে লাইনটি একজন মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে সেই লাইনটি একজন লেখকের মাথায় আনতে হয়ত কয়েক বছর লেগেছিল। সেল্ফ হেল্প বা আত্মউন্নয়নমূলক যে সকল বই রয়েছে সেগুলোকে অনেক সফল মানুষরা তাদের জীবনের বিভিন্ন চিন্তা, ভাবনা এবং অর্জিত দর্শন গুলোকে তুলে ধরেছেন। সেই সাথে তারা আরো দিক নির্দেশনামূলক কথাবার্তা লিখে থাকেন যেগুলো সফল হওয়ার পথে সৃষ্ট সমস্যা গুলোকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। কিংবা তারা সফল হতে যে সমস্যাগুলো সম্মুখীন হয়েছিলেন সেগুলো তারা কিভাবে সমাধান করেছিলেন সেই পদগুলো তুলে ধরে থাকেন।

হয়তো আপনি আপনার জীবনে সেরকম বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন সে ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানের সেই দিকগুলো প্রয়োগ করে আপনিও আপনার জীবনের বাধা গুলো অতিক্রম করতে পারেন। কিন্তু আপনার যদি সে বইগুলো পড়া না থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো সমস্যাগুলো সমাধান করতে আপনার দীর্ঘদিন লেগে যেতে পারে। এমনও হতে পারে আপনি সেই সমস্যার সমাধান খুঁজেই পাবেন না। মনে করুন আপনি মিশরের পিরামিড সম্পর্কে পিরামিডের রহস্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন। যদি গবেষকরা দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং কষ্ট দ্বারা পিরামিডের ওপর গবেষণা করে বইগুলো প্রকাশ না করতেন তাহলে সে রহস্য উন্মোচন করতে হলে আপনাকে হয়তো অনেক বছর সাধনা এবং পরিশ্রম করতে হতো।

এবং হয়তোবা সময় এবং সুযোগের অভাবে আপনার দ্বারা সেই তথ্য জানা অসম্ভব হতো। সুতরাং বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞানীদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আপনার নিকটে চলে আসে যা আপনার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আপনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। অনেকের মনে হতে পারে বইয়ের পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। কিন্তু আপনি যদি চিন্তা করে দেখেন যে একজন লেখকের সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞান আপনি নিমিষেই অর্জন করতে পারে।

এক্ষেত্রে আপনি ওই লেখকের বই থেকে অর্জিত জ্ঞান আপনাকে কয়েক বছর এগিয়ে দিবে। আপনি হয়তো পিটার থেইল বা বিল গেটস এর মত সফল মানুষদের সাথে কখনও মুখোমুখী কথা বলতে পারবেন না। কিন্তু তাদের জীবনের কথা, চিন্তাধারা এমনকি তাদের সাফল্যের রহস্য জানার জন্য তাদের একটি বই যথেষ্ট।  শত বছর আগে মারা যাওয়া একজন মহান বিজ্ঞানী বা মনিষী কিভাবে জীবনযাপন করতেন, কিভাবে তাঁরা চিন্তাভাবনা করতেন – তা জানতে একটি বই হতে পারে আপনার জন্য সেরা মাধ্যম।

নিজেকে স্মার্ট এবং বিচক্ষণ করে গড়ে তুলতে অবশ্যই বই পড়ুন। বই পড়া মানে মস্তিষ্ক এবং বুদ্ধিমত্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া। বই পড়ার মাধ্যমে আপনার বুদ্ধি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথেও আপনার চিন্তাশক্তি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। ইতিহাস থেকে জানা যায় বিশ্বের যত জ্ঞানী এবং সফল মানুষ হয়েছেন তাদের কমবেশি সকলেরই বই পড়ার নেশা ছিল এবং এখনো আছে। ওয়ারেন বাফেট, বিল গেটস থেকে শুরু করে ভিঞ্চি, আলেকজান্ডার, নেপোলিয়ন, ম্যান্ডেলা – এদের সবাই দারুন ভাবে বইয়ের ভক্ত ছিলেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url