পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ

মলদ্বারের টিস্যুতে ক্যান্সার কোষের মাধ্যমে টিউমার সৃষ্টি হয় ফলে পায়ুপথে ক্যান্সার হয়ে থাকে।মলদ্বারের নিচের দিকে একটি ছোট রক্তনালীর বৃদ্ধি ঘটে। যার ফলে পায়ু পথে ব্যথা এবং মলদ্বার দিয়ে রক্তপাতের লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় রক্তপাত হয়ে থাকে।
পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ

সূচিপত্রঃ- পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ


পাইলস হওয়া মানেই যে ক্যান্সার ব্যাপারটি তেমন নয়। তবে এই লক্ষণ গুলো পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ গুলোর মধ্যে পড়ে। সাধারণত মলদ্বার ক্যান্সার একটি বিরল ঘটনা। তবে স্বাভাবিক ভাবে মলদ্বারে ক্যান্সার হলে তা যে কোন সময় সম্পন্ন শরীর ছড়িয়ে যেতে পারে। আপনার এরূপ কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

পাইলস কি

পাইলস হলো মলদ্বারের একটি ছোট্ট অংশ। প্রতিটি সুস্থ মানুষের পাইলস রয়েছে। পাইলস মলদ্বারের নিচের দিকে অবস্থান করে এবং এটি সম্পূর্ণরূপে রক্ত দ্বারা পূর্ণ থাকে। পাইলস সাধারণত মল এবং বাতাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। কোন কারণে মলত্যাগ করার সময় যখন এই পাইলসটি মালদ্বার থেকে বেরিয়ে আসে বা মলত্যাগ করার সময় রক্তক্ষরণ হয় তখন তাকে পাইলস রোগ বলে ধরা হয়।

পাইলসরে লক্ষণ

চিকিৎসকরা বলেন পাইলসের প্রাথমিক লক্ষণ হল রক্তপাত। তবে এই লক্ষণটি পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ নয়। ডাক্তাররা রক্তপাতের প্রকারভেদ বের করার চেষ্টা করেন। রক্তপাত হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা রক্তক্ষরণের ধরণ বের করার চেষ্টা করি। কখনো ফোটাই ফোটাই রক্ত পড়তে পারে আবার কখনো মলদ্বারের সঙ্গে রক্ত লেগে থাকতে পারে। এগুলো সাধারণ ব্যাপার। এক্ষেত্রে সাধারণত ব্যথা অনুভূত হয় না।
এছাড়াও অনেক সময় এর রং কালো, বাদামি বা ব্রাউন রঙের হতে পারে। মলত্যাগের সময় রক্তক্ষরণের সাথে সাথে আমাশয় এর লক্ষণ আছে কিনা এই বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মলত্যাগের সাথে আমাশয় হলে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি লক্ষ্য করতে হবে। এছাড়াও পায়খানা নিয়মিত হচ্ছে কিনা, আগে নিয়মিত সকালে পায়খানা হতো বর্তমানে হচ্ছে না। এ সকল বিষয়ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সকল লক্ষণ গুলো দেখা দিলে এবং মলত্যাগের নাম্বার গুলোর পরিবর্তন ঘটলে তখন পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ দেখা দিতে পারে বা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ গুলো হেমোরয়েড (hemorrhoids), গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রোগ (Gastrointestinal diseases) এবং বিরক্তিকর পেটের সমস্যা (Irritable bowel syndrome) র লক্ষণগুলো একই ধরনের হতে পারে।
এর মধ্যে রয়েছেঃ
  • অন্ত্র অভ্যাস পরিবর্তন (Changes in bowel habits)
  • পাতলা মল
  • চুলকানি বা মলদ্বার থেকে স্রাব
  • মলদ্বার থেকে রক্তপাত হচ্ছে
  • ব্যথা, চাপ, বা মলদ্বারের কাছাকাছি গলদ গঠন
  • মলদ্বার খালে একটি বৃদ্ধি বা ভর
  • পায়ুপথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হতে পারে।
  • মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • তলপেটে দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
  • রক্ত স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
  • ক্লান্তি অনুভূত হয়।
  • বারবার মলত্যাগের তাগিদ আসে।
  • বমি বমি ভাব হয়।
  • ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি।
আপনার যদি ওপরে লক্ষণগুলো দেখা দিয়ে থাকে এবং আপনি যদি নিশ্চিত হতে না পারেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। আপনার দেখা দেওয়া লক্ষণগুলো পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ কিনা তা নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা করতে সক্ষম হবেন।

পাইলসের লক্ষণ ও ক্যান্সারের লক্ষণগুলো একই নাকি আলাদা

পাইলসের প্রাথমিক লক্ষণ হল রক্তপাত। মলত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এবং মলত্যাগের সময় মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে এই ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে না দেখে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
পায়েল রোগীদের ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় সাধারণত লালচে রংয়ের রক্ত বের হয়। অপরদিকে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের এই রক্তের রং কালচে হয়ে যাবে। কালচে রং দেহের অভ্যন্তর থেকে নির্গত রক্তের সূচক।

অর্শ বা পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ও লক্ষণ

আমরা অনেকেই মনে করে থাকি পাইলস থেকে ক্যান্সার হয়ে থাকে কিন্তু বিষয়টি তা নয়। তবে যে সকল রোগী পাইলস থেকে আরোগ্য লাভের জন্য বারবার অপারেশন বা সার্জারি করেন তাদের ক্ষেত্রেই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মলদ্বারের রোগ গুলোর মধ্যে পাইলস একটি জটিল রোগ। তবে রেক্টাম ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এ রোগীদের একই সঙ্গে পাইলস এবং ক্যান্সার থাকতে পারে। যা পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে রোগীদের পাইলসের ট্রিটমেন্ট করার মাধ্যমে জটিলতা কিছু পরিমাণ কমলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে কষ্টগুলো সমাধান করা যায় না।

পরবর্তীতে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা যেমন- কোলনস্কপি বা সিগময়ডস্কপি করলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। যে সকল রোগী বহু বছর ধরে পাইলসের ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সমস্যাটি জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে। শরীরে বহু বছর ধরে পাইলস রোগ থাকার ফলে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের বয়স পঞ্চাশের বেশি এবং যাদের ভাইটাল কোর্স কোনো কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে তাদের ক্ষেত্রে এরকম সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
স্মরণ রাখা উচিত যে পাইলস এর ক্ষেত্রে বারবার অপারেশন বা সার্জারি করার ফলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সুতরাং পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ হলো পাইলস থেকে মুক্তির জন্য বার বার অপারেশন করা। পাইলস রোগীদের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে অর্শ বা পাইলস এর মত জটিল রোগটি খুব অল্প সময়ে সেরে যায়। মলত্যাগ করার সময় মলের সাথে রক্ত বের হওয়াকে পাইলস বলে মনে করা হয়।

যদিও পাইলস বা অর্শের লক্ষণগুলো পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ বিশেষ করে কোলন ক্যান্সারের উপসর্গ বা লক্ষণের সাথে ব্যাপক মিল রয়েছে। চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী, ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে বর্তমানে খাদ্য অভ্যাসে পরিবর্তন, প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম না করা, শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া, ফাস্টফুড খাওয়া এবং অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে অল্প বয়সে অনেকেই কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

তবে এ সকল উপসর্গ কে পাইলসের উপসর্গ ভেবে ভুল না করে ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ নেয়া উচিত।  তাছাড়া এই লক্ষণগুলো পাইলসের লক্ষণ না হয়ে পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে আপনার শরীরে ক্যান্সার বাসা বাধতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে মলদ্বার ও অন্ত্রের ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই এ সকল উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন যে এই লক্ষণগুলো পাইলসের নাকি পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ  বিশেষ করে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ। মলত্যাগ করার সময় পাইলসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে লালচে রঙের রক্তক্ষরণ হতে পারে অথবা মলের সঙ্গে রক্ত লেগে থাকতে পারে। অন্যদিকে, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কালচে রঙের রক্তক্ষরণ হতে পারে। সুতরাং এই লক্ষণগুলো পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ হয়ে যেতে পারে।

পাইলস হওয়ার কারণ

একজন মানুষের পাইলস হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলো হল-দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, বারবার ডায়রিয়া হওয়া, মলত্যাগের সময় অনেকক্ষণ ধরে টয়লেটে বসে থাকা এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা দাঁড়িয়ে থেকে কোন কাজ করা ইত্যাদি অনেক বিষয়ের কারণে পাইলস হতে পারে। ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, কায়িক পরিশ্রমের সময় ভারি ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা বা কম করা। এছাড়াও পাইলস হওয়ার পেছনে যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে সেটি হল দীর্ঘদিন ধরে পেটের অসুখ। 

প্রকৃতপক্ষে যে সমস্যার জন্য এই রোগটি হয় সেটি হল Tubercular Miasm যেটি হলো Psoric Miasm (Psora) এবং Syphilitic Miasm (Syphilis) এর মিলিত ফল। গর্ভকালীন সময়ে, পায়ুপথে যৌন কাজ করা, যকৃতের রোগ অথবা লিভার ফিরোসিসের কারণে রোগীদের এ আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এই সকল লক্ষণ গুলো আপনার পাইলস থেকে ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। উপরিক্ত যেকোনো কারণ গুলো দেখা দিলে পায়ুপথের শিরা গুলো চাপের ফলে পাইলস সৃষ্টি হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url